পাঠদানে একটু সচেতন হলেই ধর্মের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব হবে সহনশীল
‘সম্প্রীতি বুনন’ নিয়ে চট্টগ্রামে ধর্ম বিষয়ের স্কুলশিক্ষকদের কর্মশালা
‘সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শিক্ষকদের ভূমিকা অনন্য। শিশু মানসে সম্প্রীতির আবাদ করতে পারেন শিক্ষকবৃন্দ। সারা বিশ্বে প্রবহমান আন্তঃধর্মীয় সংঘাত ও সহিংসতা প্রশমনে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়তে হবে। সুন্দরের আরাধনা দিয়েই সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করা যায়, হিংসা-বিদ্বেষ দিয়ে নয়। কেননা মানুষ মানুষকে জয় করেছে হৃদয় দিয়ে, যুদ্ধ দিয়ে নয়।’
‘কালটিভেশন অফ সেক্যুলার মাইন্ড’ অর্থাৎ ‘সম্প্রীতি বুনন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্কুল পর্যায়ে পাঠদানকারী ধর্ম বিষয়ের শিক্ষকদের কর্মশালায় উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ৮ ও ৯ জানুয়ারি (শুক্র ও শনিবার) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারি হলে দুদিনব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় রিসোর্সপারসন হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মনজুরুল আলম।
‘সম্প্রীতি বুনন’ শীর্ষক প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী চবি দর্শন বিভাগের শিক্ষক মাছুম আহমেদ কর্মশালায় ধারণাপত্র তুলে ধরেন। তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রকল্পের পরিচালক শান্তিকর্মী সনৎ কুমার বড়ুয়া ও শাসন বড়ুয়া কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং দলীয় কার্যাদির নেতৃত্ব দেন।
এতে স্কুলে পঠিত পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীতে পাঠ্য ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের গ্রন্থসমূহের ওপর গবেষণালব্ধ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও অ-সম্প্রীতিময় বক্তব্যের নির্যাস উপস্থাপন করেন প্রকল্পের গবেষণা সহকারী গোলাম রাব্বানী ইমার ও কাজী তৌফিকা ইসলাম।
কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার কর্মশালায় বলেন, ‘আচরণের কারণে মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা মুখ থুবড়ে পড়ে। সমাজ বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হচ্ছে মানুষের মানবিকতা লোপ পাচ্ছে। সমাজ বিবর্তনের ধারায় মানুষের মান ক্রমশ কমছে। মানুষকে নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে সম্প্রীতির বোধ জাগাতে হবে। মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবেই গণ্য করতে হবে। সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে হৃদয় দিয়ে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য, কারণ কোমল মনের আদর্শ হয়ে দাঁড়ান শিক্ষকবৃন্দ।’
কর্মশালায় প্রফেসর মনজুরুল আলম ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যক্তির ‘বক্তা’ ভূমিকার তাৎপর্য তুলে ধরেন। ‘ঘৃণা-বক্তব্য’ ও ‘মারাত্মক-বক্তব্য’ উপলব্ধিকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি এ বিষয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেন।
প্রকল্পের গবেষণা সহকারী মুক্তা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় কর্মশালায় সম্প্রীতিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন গবেষণা সহকারী প্রার্থী ঘোষ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী ও সাংবাদিক ফারুক তাহের। কর্মশালায় নগরী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার নানা ধরনের বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
তাঁরা প্রত্যেকেই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিনির্মাণে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সৌহার্দপূর্ণ আচরণ, পারিবারিক শিষ্টাচার, স্কুল পর্যায়ে সব ধর্মের সমন্বয়মূলক পাঠদান এবং পাঠদানে শিক্ষকদের ইতিবাচক ও উদার মনোভাবের ওপর সমধিক গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা একমত হন, পাঠদানে একটু সচেতন হলেই পরস্পরের ধর্মের প্রতি শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতি ও সহনশীল মনোভাব গঠন সম্ভব।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নেটওয়ার্ক ফর রেলিজিয়াস অ্যান্ড ট্র্যাডিশনাল পিসমেকার্সসহ কয়েকটি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সম্প্রীতি বুনন’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পটি চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন হচ্ছে।