ধীরে চলো/ লালখানবাজারে মাসুমের বাতিল অস্ত্র জব্দ করতে পারেনি পুলিশ

কাউন্সিলর মানিকের প্রশ্ন, অস্ত্রের কী প্রয়োজন মাসুমের?

লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাতিলের নির্দেশনা মাসুমের বাসায় নিয়ে গেলে তার ছোট ভাই তা গ্রহণ করেন। তবে ২ আগস্ট রাত পর্যন্ত অস্ত্রগুলো জব্দ করা যায়নি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক ২২ জুলাই দিদারুল আলম মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ থাকা দুটি অস্ত্রের (শটগান/৫৪৪৪/ডবলমুরিং ও পিস্তল/৩৩/খুলশী) লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনে মাসুমকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করেন কাউন্সিলর মানিক। নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে মাসুমকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও ছাত্রলীগ-যুবলীগের চার নেতার হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অস্ত্রের লাইসেন্স জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমি দেখি। তবে মাসুমের লাইসেন্স বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’

এ বিষয়ে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্রগুলো জব্দের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা অস্ত্রগুলো জব্দ করার জন্য বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) তার বাসায় যাই। মাসুম না থাকায় তা জব্দ করা যায়নি।

তবে সুদীপ্ত হত্যায় তার নামে স্বীকারোক্তি আসার পর থেকে মাসুম চট্টগ্রাম থেকে সটকে পড়েছে বলে জানা গেছে। ১ আগস্টের ‘অভিযানে’ অস্ত্র জব্দ করা যায়নি। তবে মাসুম চট্টগ্রাম ফিরলে থানায় অস্ত্র জমা দিতে বলে দেওয়া হয়েছে। মাসুম না আসলে আদৌ জব্দ হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি খুলশী থানার পুলিশ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘আমার অস্ত্রে কখনই কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে এই অস্ত্র রাখা হয়েছে। দল থেকে যখন চসিক নির্বাচনে আমাকে কাউন্সিলর নির্বাচন করা প্রস্তুতি নিতে বলা হলো তখনই মানিক (বর্তমান কাউন্সিলর) আমাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছেন। আমি শঙ্কিত, আমাকে নিরস্ত্র করে খুন করা হবে। আমি আমার নিরাপত্তা চাই।’

কাউন্সিলর মানিক বলেন, ‘মাসুম যদি জনপ্রতিনিধি হতে চায় তার অস্ত্রের কী প্রয়োজন? শাটারগান আর পিস্তল কী ভোট দিতে পারে? জনপ্রতিনিধি হতে হলে জনগণকে দরকার হবে। আমি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি ‘বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার’ নিয়ে। মন্ত্রণালয় তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তাই লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্রগুলো জব্দের নির্দেশ দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাসুম যখন বিদেশে পলাতক ছিল তখন এলাকায় একটা লাশও পড়েনি। সে দেশে আসার পর এলাকায় একাধিক লাশ পড়েছে। সে যদি স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিই হয় তার বিরুদ্ধে হত্যার যত অভিযোগ সবতো ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা কর্মী। সে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি কীভাবে হয়? তার শেল্টারে শিবির, ছাত্রদল কেন?’

মানিক আরো অভিযোগ করেন, ‘২৮ জুন স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সাইদুলকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা তারই ইঙ্গিতে হয়েছে। যার জেরে ২৯ জুন লালখান বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সুদীপ্ত হত্যায় মূল অভিযোগ তার দিকে। এভাবে একে একে ১৮টি হত্যার অভিযোগ তার দিকে কেন? লালখান বাজার এলাকা মাদকমুক্ত ছিল। গত চার বছর মাদকের স্বর্গে পরিণত হয়েছে লালখান বাজার এলাকা। সব মাদক ব্যবসায়ী তার শেল্টারে চলে। কিছু হলেই অস্ত্র উঁচিয়ে ছুটে আসে।’

এ ব্যাপারে মাসুম বলেন, ‘সুদীপ্ত আমার খুব কাছের ছোট ভাই ছিল। তার সাথে আমার খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে এই ঘটনায় আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। অথচ আমার নামে কোন মামলা নেই। মানিক জাসদ করতো। এখনো আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যও হয়নি। সদস্য সংগ্রহের সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে নাম লিখাতে আবেদন করেছিল। আমরা এখনো তাকে সদস্যপদ দিই নাই।’

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর মানিক বলেন, ‘আমি যখন থেকে আওয়ামী লীগ করি মাসুম তখন রাজনীতি শুরু করেনি। সে যদি অপরাধীই না হয়, তার এত ভয় কীসের? একজন মানুষের দুই দুইটি অস্ত্রের লাইসেন্স কেন? লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্রও তার অনুসারীরা ব্যবহার করেছে।’

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!