ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ১২ দিন হিমঘরে কিশোরীর লাশ

ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ১২ দিন ধরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে কিশোরী লাকিং মে ওরফে হালিমাতুস সাদিয়ার মরদেহ। কিশোরী লাকিং মে’র মরদেহ কোন ধর্মীয় রীতিতে সমাহিত হবে-এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। তবে আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। আদালত র‌্যাবকে দায়িত্ব দিয়েছে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য।

জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর রাতে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুর্মূর্ষু লাকিং মেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে তাকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে যান তার স্বামী আতাউল্লাহ। হাসপাতালে তার বিষপানের আলামত দেখে চিকিৎসকরা তার পাকস্থলী পরিষ্কার করেন পরে অবস্থার অবনতি হলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে তার মরদেহ হস্তান্তরে দেখা দেয় জটিলতা। কারন লাকিং মে’র পিতা লালা অং ও স্বামী আতাউল্লাহ মরদেহ দাবি করছিলেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক আব্দুল হালিম জানান, গত ১০ ডিসেম্বর সদর হাসপাতাল থেকে অপমৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ লাশ গ্রহণ করে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। এসময় স্বামী আতাউল্লাহ ও পিতা লালা অং মরদেহের দাবি করাই পুলিশ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত কাকে মরদেহ হস্তান্তর করবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় মরদেহটি পুলিশি হেফাজতে হিমঘরে রাখা হয়।

পিতার দাবি গত ৫ জানুয়ারি তার কিশোরি মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছিল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শীলখালী চাকমা পাড়া থেকে। এসময় থানায় অপহরণের মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে কক্সবাজার নারী শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ মামলা করেছিলেন তিনি। সেই মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়ায় মেয়েকে উদ্ধার করতে না পারায় তার মেয়ের করুণ পরিণতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ঘটনায় পুনঃতদন্ত চেয়ে আদালতে নারাজি দেন তিনি। তার অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়েকে ফিরে পেতে চান এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় বিধান মতে সৎকার করতে চান।

তিনি জানান, আমি সাগরে গিয়েছিলাম মাছ শিকারে। এসে শুনি একটি সিএনজি অটোরিকশা করে আমার মেয়েকে ধরে নিয়ে গেছে। বোর্ড কোর্ট সব জায়গায় ঘুরেছি কোথাও আমার মেয়ে ফিরে পাইনি। এখন লাশ পাওয়া গেছে আমি আমার মেয়ের লাশ চাই।

এদিকে, লাকিং মে’র স্বামী আতাউল্লাহর দাবি গত ২১ জানুয়ারি কুমিল্লায় লাকিং মে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হালিমাতুস সাদিয়া নামধারন করে এবং একইদিন এফিডেবিট মুলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করে। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। যার বয়স এক মাসের কাছাকাছি। গত ৯ ডিসেম্বর একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে লাকিং মেকে একটি থাপ্পর দেয়। এরপর অভিমান করে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে বলে দাবি করেন তিনি। সে তার স্ত্রীকে ইসলাম ধর্মমতে দাফন করতে চান।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ উল্লাহ জানান, মাস ছয়েক আগে আতাউল্লাহ চাকমা মেয়েটিকে নিয়ে বাড়িতে আসে এবং সংসার করে যাচ্ছিল। ঘটনার দিন বিষপানের খবরে তিনি সেখানে যান।

লাকিং মে’র পিতার নিয়োগ করা আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন জানান, যেহেতু সে অপ্রাপ্তবয়স্কা ছিল সেহেতু তার ধর্মান্তরিত কিংবা বিয়ে করার মতো নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোন আইনী অধিকার সৃষ্টি হয়নি। ফলে তার পিতাই মেয়ের মরদেহের দাবিদার। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পিতাকে মরদেহ হন্তান্তর করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।

র‌্যাবের তদন্তকারি কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী জানান, তিনি গত পরশু মামলাটি হাতে পেয়েছেন এবং তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং আদালতের সিদ্ধান্ত মতে সব হবে বলে জানান তিনি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!