দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে টিসি স্পোর্টসের জালে চট্টগ্রাম আবাহনীর এক হালি গোল

পর্দা উঠলো শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের

দুই চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী ও মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ড্রয়ে এক গ্রুপে দেখেই সবাই ভেবেছিলেন এবার গ্রুপ পর্বেই জমবে খেলা। আয়োজক কমিটি বর্তমান ও সাবেক দুই চ্যাম্পিয়নের ম্যাচ দিয়েই শুরু করে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের। কিন্তু দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে হালে পানি পেল না বর্তমান চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টস। মালদ্বীপের ক্লাবটিকে ৪-১ গোলে ডুবিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরের পর্দা তুলল ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শনিবার প্রথম ম্যাচের আগে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। নামমাত্র এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্যসচিব হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংসদ এমএ লতিফ, বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, টুর্নামেন্টের চিফ কো অর্ডিনেটর তরফদার মো. রুহুল আমিন, মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক আলী আব্বাস। সাদামাঠা অনুষ্ঠান দিয়ে উদ্বোধনী পর্ব সারা হলেও মাঠে উপস্থিত পাঁচ হাজার দর্শককে মন খারাপ করতে দেননি চট্টগ্রামের খেলোয়াড়রা। খেলার শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে ছড়ি ঘুরিয়েছে স্বাগতিকরা।

বেলুন উড়িয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের উদ্বোধন করছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই সময় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বেলুন উড়িয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের উদ্বোধন করছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই সময় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে স্বাগতিকদের এগিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়াসিন আরাফাত। তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শটে চট্টগ্রামের এ ডিফেন্ডার বল পাঠান বাইরে। তবে অষ্টম মিনিটেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় চট্টগ্রাম। ডি-বক্সের বামপ্রান্ত দিয়ে আরিফুল ইসলামের কাটব্যাক থেকে জোরাল শটে বল জালে জড়ান নাইজেরিয়ান চিন্দুমা ম্যাথিউ। প্রথম গোলের পর দ্বিতীয় গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি চট্টগ্রাম আবাহনীকে। দশম মিনিটে দর্শনীয় এক শটে ব্যবধান ২-০ করেন ইয়াসিন আরাফাত। একক নৈপুণ্যে মাঝমাঠে বল টেনে নিয়েছিলেন। পরে ডি-বক্সের বামপ্রান্তের বাইরে থেকে রংধনুর মতো বাঁকানো এক শটে মালদ্বীপ গোলরক্ষক ইব্রাহিম আদমের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়ান চট্টগ্রামের ১৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার।

পরে ২৯ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মালদ্বীপ টিসি স্পোর্টসের মোহাম্মদ সামির। ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া তার শট অল্পের জন্য খুঁজে পায়নি লক্ষ্য। পরের মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি চট্টগ্রামের ফরোয়ার্ড রোতকোভিচ লুকার। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে স্বাগতিক দর্শকদের তৃতীয়বারের মতো উল্লাসে ভাসান চিন্দুমা ম্যাথিউ। টিসির দূর্বল বাম রক্ষণকে কাজে লাগিয়ে ডি-বক্সে বল পান এ মিডফিল্ডার। পাস দেন আরিফুলকে। আরিফ বল ধরে রাখেননি, ক্রস করেছিলেন ম্যাথিউয়ের দিকে। পেয়েই দেরি করেননি, দারুণ এক ভলিতে বল জড়িয়ে দেন জালে। আবাহনী ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করেন। 

ম্যাচের ৬০ মিনিটের মাথায় টিসি স্পোর্টসের ফরোয়ার্ড ইসমাঈল ইয়াসাকে ম্যাচের প্রথম কার্ড দেখান রেফারি জর্ডানের মুরাদ আলজাওয়ারেহ। বেআইনিভাবে চট্টগ্রামের সোহেল রানাকে  বাঁধা দেয়ায় এই কার্ড দেখেন তিনি। ওই সময় সময় চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে দুই গোল দেয়া ম্যাথুকে মাঠ থেকে তুলে নেন কোচ মারুফ। তার বদলে মাঠে নামেন মানিক হোসাইন মোল্লাকে। ম্যাচের ৬৭ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম আবাহনীর ডি বক্সের কিছুটা বাইরে ফ্রি কিক পায় টিসি স্পোর্টস। কিন্তু আকরাম আবদুল ঘানির নেয়া ফ্রি কিক গোল পোস্টের অনেক উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। এর এক মিনিট পর কর্নার পায় টিসি স্পোর্টস। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি তারা। কর্নার থেকে পাওয়া বল নিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। আর ৭১ মিনিটে মালদ্বীপ গোলরক্ষকের ভুলে চট্টগ্রামকে চতুর্থ গোল উপহার দেন রোতকোভিচ লুকা। ডি-বক্সের ডানপ্রান্তের বাইরে থেকে লুকার দিকে বল উড়িয়ে দিয়েছিলেন আরিফুল ইসলাম। মালদ্বীপ গোলরক্ষক বেড়িয়ে এসে চেয়েছিলেন বল গ্রিপ করতে। তার পিচ্ছিল গ্লাভস গলে বল গিয়ে পড়ে ঠিক লুকার পায়েই। সুযোগ লুফে নিতে দেরি করেননি মন্টেনেগ্রোর ফরোয়ার্ড। আলতো শটে পূর্ণ করেন গোলের হালি।

ম্যাচের রেজাল্ট তখন অনুমিত। দর্শকরাও ধীরে ধীরে গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেন। খেলার শেষ বাঁশি বাজার তিন মিনিট আগে সান্ত্বনার একটি গোল করে ব্যবধান কিছুটা কমায় টিসি স্পোর্টস। মোহাম্মদ সামিরের ক্রসে ইসমাইল ইয়াসা চট্টগ্রাম আবাহনীর জালে প্রথমবারের মতো বল পাঠান। এক মিনিট আবাহনী সুযোগ পেয়েছিল ব্যবধান আরও বাড়ানোর। কিন্তু লুকা সেই সুযোগ মিস করেন। 
 
ম্যাচ শেষে মালদ্বীপ টিসি স্পোর্টস এর কোচ নিজেদের টায়ার্ডনেসের অজুহাত দেন। লম্বা জার্নি করে আসা, মাত্র আগেরদিন চট্টগ্রাম এসে পৌঁছে সময়মতো বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায়নি বলে জানান। দলের অধিনায়ক জানান, হোটেলে চেক ইন করার জন্য তাদেরকে তিন ঘণ্টার মতো অপেক্ষায় থাকতে হয়। যা নিয়ে দলের সবাই ক্ষুব্ধ বলেও জানান তিনি।  তাছাড়া এটি তাদের মৌসুমের প্রথম ম্যাচ বলেও জানান। অন্যদিকে
চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক জানান, এটি তাদের প্রথম ম্যাচ। পরের ম্যাচ আরও ভালো খেলার আশা করেন। চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়েরাও অনেক বেশি টায়ার্ড ছিলাম। আবাহনীর টার্গেট ছিল টিসি স্পোর্টস এর ধীর শুরুকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত আক্রমণ রচনা করা। দ্রুতই কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়া। তবে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ ম্যাচে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করেছিলেন।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ বিতর্ক:
পুরো খেলায় অনেকটা নিষ্প্রভ ছিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে। ম্যাচে তাকে খোঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয়। ম্যাচ শেষে সেটি স্বীকারও করেছেন বাংলাদেশ দলেরও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি জানান, গত এক মাসে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হয়েছে। সেই সাথে ছিল ভ্রমণ ক্লান্তি। নিজের শতভাগের কাছাকাছিও দিতে না পারা সেই জামাল ভূঁইয়াকে ম্যাচ সেরা ঘোষণা করে আয়োজকরা বেশ হাসির খোরাক যোগান। প্রেস বক্সে বসা ঢাকা-চট্টগ্রামের কোন সাংবাদিকই বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কী করে জামাল ভূঁইয়া ম্যাচ সেরা হলেন সেটি জানতে যোগাযোগ করা হয় ম্যান অব দ্য ম্যাচ এডজুটিকেটর কমিটির আহ্বায়ক সিজেকেএস সহসভাপতি হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, ‘আমাদের কমিটিতে আমিসহ ছয়জন (বিজয় সেন গুপ্ত, অমলেন্দু বড়ুয়া, ডেরিক রেন্ডন, আ ন ম কুদ্দুস চৌধুরী ও এস এম শহীদুল ইসলাম) ঐক্যমতে পৌঁছে সবার স্বাক্ষরে লিখিতভাবে জানিয়ে দিই ১৯ নম্বর জার্সি পরিহিত চিন্দুমা ম্যাথিউকে। কিন্তু ঘোষণা মঞ্চে কি করে এবং কীভাবে জামাল ভূঁইয়াকে ম্যাচ সেরা করা হলো সেটি আমার বোধগম্য নয়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!