‘দাপট’—সরকারি টাকায় বিপদজনক সড়ক, অন্যের জমি বেপরোয়া খুঁড়ছে ঠিকাদার

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা থেকে ডাঙ্গারচর পর্যন্ত সোয়া পাঁচ কিলোমিটারের সড়কটি ছিল ছয় ফুটের। সম্প্রতি ওই সড়কটির পরিধি ১৮ ফুট বাড়িয়ে সংস্কার কাজ শুরু করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে ভরাটের মাটি ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া অন্যের জমি থেকে মাটি কেটে ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করছে সড়কটি।

মুল সড়কটির পাশ থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে মাটি কাটতে চুক্তি অনুযায়ী নিষেধ রয়েছে। সেই বিধিনিষেধ না মেনে পাঁচ ফুটের মধ্যেই পুরো সড়কের পাশ থেকেই মাটি কাটছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এতে সড়কটি সংস্কার করার পরও বর্ষার টানা বৃষ্টিতে ধসে পড়া আশংকা করছে স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, চরলক্ষ্যা ও ডাঙ্গারচর এলাকায় একাধিক জমি মালিকদের কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই মাটি কেটে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর কর্ণফুলী- ডাঙ্গারচর সড়কটি সংস্কারের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান টেকনো বির্ল্ডাস ও এমএএইচ কনস্ট্রাকশন (জেবি)। এলজিইডি’র আওতাধীন এ সড়কের সংস্কার কাজ ২০২২ সালের ১৭ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

সড়কটিতে ১৮ ফুটের পাকা অংশের মধ্যে ১০ ফুট পরিধি হবে মুল রাস্তা। বাকিটা অংশ হবে ফুটপাত। সড়কটির শুধু মাত্র বাজারের অংশে ড্রেন নির্মাণের কাজ করার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলমান সড়কটির পাশ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। পাশপাশি মাটি নেওয়ার কারণে সেখানে তৈরি হয়েছে বড়বড় গর্ত। পুরো সড়কজুড়ে মাটি কাটা হয়েছে একই পদ্ধতিতে। বর্ষায় টানা বৃষ্টির মৌসুমে এসব গর্তগুলোর কারণে সড়ক থেকে মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়া আশংকা করছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রোকুনুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘এ সড়ক নির্মাণের কারণে আমার নিজের এবং পরিবারের প্রায় ১০ হাজার বর্গ ফুটের জমি বর্তমান সড়কের ভেতরে ঢুকে গেছে। গায়ে জোরে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই আমার জমি থেকে মাটি কেটে নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়কটি সম্প্রসারণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া দূরে থাক, জমি থেকে মাটি তুলে নেয়ারও কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। অথচ রাস্তার জন্য জমি নেওয়ায় আমার অন্তত অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একইসঙ্গে মাটি তুলে নেয়ায় ওই স্থান পুনরায় ভরাট করতে গেলে আবারও কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে সাব-কন্ট্রাক্টর হায়দার আলী বলেন, ‘রাস্তার কাজ কিভাবে করছি, তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? সড়কটি যেভাবে করার দরকার সেভাবে করা হচ্ছে।’

আরেকজন সাব-কন্ট্রাক্টর কামাল হোসেন নিকট অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্যে না করে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জানতে চাইলে মুল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সড়কটি সংস্কারের কাজটি সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছি কয়েকজন ঠিকাদারকে। তারা কিভাবে করছে সেটাতো আর জানি না। আপনার (প্রতিবেদক) অভিযোগটি পেয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্ণফুলী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে নিজ উদ্যোগে মাটি ব্যবস্থা করে পুরো সড়কটি নির্মাণকাজ করতে হবে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে বর্তমান সড়কটি হচ্ছে ১৮ ফুটের। সেখানে ১০ ফুট থাকছে পাকা। পুরো সড়কটি দুই পাশের অংশ থেকে ৫ ফুটের ভেতরে কোনোভাবে মাটি কাটা যাবে না। এ রকম কোনো কিছু দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যের জমি থেকে ঠিকাদার কিভাবে মাটি কাটলো সেটা তাদের বিষয়। চুক্তিপত্রের বিষয়গুলো না মানলে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!