ট্রেনের ভালো বগিকে ‘পরিত্যক্ত’ বানিয়ে নতুন বগি আমদানির ফন্দিতে বড় সিন্ডিকেট

সরাসরি জড়িত পূর্ব রেলের ওয়ার্কশপ শাখা

মেরামত করে অনায়াসে চালানো যাবে— এমন বগিকে ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করে স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে তুলে বিদেশ থেকে নতুন বগি আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে নিপুণ কৌশলে। বিদেশ থেকে বগি আমদানির পরিমাণ বাড়াতে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবেই এটি করছে— এমন তথ্যই মিলছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে। আর এই কাজে সরাসরি জড়িত রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্কশপ শাখা।

জানা গেছে, সর্বশেষ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কারখানা শাখা থেকে যে ১১টি বগিকে ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করে নিলামে তোলার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে তার মধ্যেই এমন দুটি বগি রয়েছে যেগুলো ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করার কোনো সুযোগই নেই। তালিকায় থাকা এ দুটি বগি মেরামত করে চলাচলের জন্য সচল করার কথা। অথচ এ দুটি বগিকেও ‘ব্যবহার অযোগ্য’ উল্লেখ করে পরিত্যক্ত তালিকায় পাঠানোর অভিযোগ মিলেছে।

যে ১১টি বগিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নিলামে তোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো পাহাড়তলী কারখানা শাখায় ৭০৩৪, ৭০৫০, ১৭৯৮, ১৯৮২, ৩৯৪১, ২৮৪৯, ১৬৪৮ ১৭৩২,৭০৫৪,৭০৫৩ ও ১৮৯৯ নম্বর কোচ।

গত বছরের ২৩ মে রেলওয়ে কারখানা শাখা এই ১১টি বগিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা স্ক্র্যাপ হিসাবে নিলাম ঘোষণার অনুমতি চেয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের অনুমতির জন্য পাঠায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই তালিকায় থাকা মালবাহী কোচ ৩৯৪১ ও যাত্রীবাহী ৭০৩৪ নম্বর কোচ দুটিকে কোনো কারণ ছাড়াই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

পরিত্যক্ত ঘোষণা করা এই তালিকায় কোচ নম্বর ৭০৩৪ এর ওজন নির্ধারণ করা হয় ৯ টন। অন্যদিকে মালবাহী গাড়ী নম্বর ৩৯৪১ এর ওজন ধরা হয়েছে দেড় টন। তবে এই দুটো বগি কোনভাবেই পরিত্যক্ত হওয়ার মত অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছে রেলওয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। সূত্র বলছে, বিদেশ থেকে বগি আমদানির পরিমাণ বাড়াতে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভাল বগিকেও পরিত্যক্ত দেখিয়ে ‘স্ক্র্যাপ’ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

তালিকায় থাকা অপর কোচগুলোর ওজন ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১৯৪২ নম্বর বগি ৮টন, ৭০৫০ নম্বর বগি ৯টন, ১৭৯৮ নম্বর বগি ৮টন, ২৮৪৯ নম্বর বগি সাড়ে ১০টন, ১৬৪৮ নম্বর বগি ৮ টন, ১৭৩২ নম্বর বগি ৮টন, ৭০৫৪ নম্বর বগি ৯ টন, ৭০৫৩ নম্বর বগি ৯টন ও ১৮৯৯ নম্বর বগি ৮টন।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুটি কোচের কন্ডিশনই ভালো। তাহলে কেন এ দুটি কোচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক রাশেদ লতিফকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘কাগজপত্র না দেখে’ এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তবে একই প্রশ্নের উত্তরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমি তখন দায়িত্বে ছিলাম না। তবে আমি এগুলো খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।’

এআরটি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!