রেলওয়ের টিন চুরি—অপরাধীকে আড়ালের চেষ্টা, তদন্তের স্বার্থে ওসি নয় ক্লোজ হলেন হাবিলদার

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে টিন চুরির ঘটনায় মুল অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিভাগের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চীফ ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জসিম উদ্দিন নামে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের হাবিলদারকে ক্লোজ করা হয়েছে। জসিমের দায়িত্ব কেবলই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব বন্টন করা। অথচ নিয়ম অনুযায়ী চিফ ইন্সপেক্টর (ওসি) রেদোয়ানুর রহমানের আদেশক্রমে দায়িত্ব বন্টন করে থাকেন হাবিলদার জসিম।

এদিকে এ ঘটনায় গত ১৩ জানুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দফতর থেকে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া জুনিয়রকে সিনিয়রের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির টিন চুরির ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের বিভাগীয় ডিএসটিই জাহেদ আরেফিন তন্ময়কে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে কমিটিতে কারখানা তত্ত্বাবধায়ক শফিক সাদেক ও কমান্ডেন্ট শরিফুল ইসলামকেও রাখা হয়।

কমিটি গঠনের পাশাপাশি ৮ ফ্রেব্রুয়ারি দায়ের করা জিডিতে (জিডি নম্বর-৯৪৪) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ৫ জানুয়ারি পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ কারখানা শাখায় রেলওয়ের মালামাল পাচার বিষয়ে দায়িত্ব অবহেলার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হাবিলদার জসিম উদ্দিনকে ক্লোজ করে আব্দুর রাজ্জাককে তার স্থলে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ৫ জানুয়ারি সংরক্ষিত এলাকা পাহাড়তলী রেলের ওয়ার্কসপ থেকে রেল নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর (ওসি) রেদোয়ানুর রহমান ভূয়া স্লিপে সাত জনের নামে ১৬০টি টিন বের করতে গেলে ধরা পড়ে।

কিন্তু ওই ঘটনায় সিনিয়র সিআই রেদোয়ানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর গেলেও তাকে উল্টো অস্ত্র শাখায় বদলি করা হয়। যা ‘লোভনীয় পদ’ হিসেবে পরিচিত। ফলে এ বদলিকে পুরস্কার হিসেবেই চিহ্নিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার এমন ‘পুরস্কারে’ হতবাক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

আবার ঘটনার তদন্তের বেলায়ও তাকে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন তার জুনিয়র অফিসার দিয়ে তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়। সিনিয়রের তদন্ত জুনিয়রকে দিয়ে করানোর কোনো নিয়ম না থাকলেও— এ ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে। গোয়েন্দা সিআই সালাউদ্দিন ও জেনারেল শাখার সিআই সালামত উল্লাহ জুনিয়র হয়েও অভিযুক্ত সিনিয়র সিআই-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সহকারী চিফ কমান্ডেন্ট শরিফুল ইসলাম জানান, ‘কোনো সিনিয়রের তদন্ত জুনিয়রের করার আইনগত নিয়ম নেই।’

এ বিষয় হাবিলদার জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ডিউটি বন্টনকারী। চিফ ইন্সপেক্টরের আদেশক্রমে আমি ডিউটি ভাগ করি। এতে আমার আমার সম্পৃক্ততা কি সেটাই আমি বুঝতে পারছিনা। চিফ ইন্সপেক্টর ছিলেন রেদোয়ানুর রহমান। তিনি যেভাবে লিখতে বলেন, আমি তাই করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনা পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ গেইট এলাকায় হয়েছে। উক্ত ঘটনার দিন জসিমের ডিউটি ছিলো। প্রশ্ন হল, একজন ডিউটি বন্টকারী ওই ঘটনায় কিভাবে সম্পৃক্ত হয়। তিনি জিডিতে সুষ্ঠু তদন্তের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিয়মানুযায়ী চিফ ইন্সপেক্টরকে ক্লোজ করার কথা এবং মূল অভিযুক্ত সে। সবাইকে অবাক করে মূল অভিযুক্ত রেদোয়ানুর রহমান বহাল তবিয়তে আছেন।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ডেন্ট জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও সাড়া মিলেনি।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপ থেকে চিফ ইন্সপেক্টর রেদোয়ানুর রহমান ও এসএসএই জোবায়রের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১২০ পিচ টিন পাচারের অভিযোগ উঠে। এসব টিন নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই সালাউদ্দিন (গোয়েন্দা) ও সিআই সালামত উল্লাহ আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ‘রেলের মাল পাচার ও হামলার ৩ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ’ শিরোনামে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!