ছদ্মবেশী সেই খুনি বাউল লুকাতে এসেছিলেন চট্টগ্রামেও

তিনজনকে খুন করে সেই মামলা থেকে নিজেকে আড়াল করতে ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরছিলেন বগুড়ার হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলাল (৪৫)। নিজেকে লুকাতে বাউলের ছদ্মবেশে তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় বেশ কিছুদিন অবস্থানের পর তিনি পরে চলে যান সিলেটে।

এভাবে প্রায় ২০ বছর কাটিয়ে ঘটনাচক্রে ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউলবেশী মডেল হওয়ার পর বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। বুধবার (১২ জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছদ্মবেশী বাউল হেলাল হোসেনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজের অবস্থান জানান দিতে তিনজনকে হত্যা করেন হেলাল হোসেন। ওই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলা থেকে নিজেকে আড়াল করতে গত ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরছেন তিনি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছদ্মবেশী বাউল হেলাল র‌্যাবকে জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে এলাকায় মুদির দোকান করতেন তিনি। পরে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। চুরির মামলায় ২০১৫ সালে যখন জামিন পান, তখন তিনি কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম চলে আসেন। সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থানের পর সিলেটে ছদ্মবেশ ধারণ করে কিছুদিন অবস্থান করেন।

ছদ্মবেশী বাউল হেলাল জানান, বিভিন্ন সময় সে তার নাম পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন তিনি। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেরারিভাবে জীবনযাপন করে আসছিলেন। গত চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছেন। রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হেলাল।

৫ বছর আগে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশ একটি গানের শুটিং করছিলেন নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে। শুটিং চলার সময় রেললাইনের পাশ দিয়ে একজন বাউল যাচ্ছিলেন। তখন শুটিংয়ের পরিচালক তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। হেলাল মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ শিরোনামে গানের মডেল হিসেবে পরে তাকে দেখা যায়।

ইউটিউবে প্রচারিত এই গানের মডেল হওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বগুড়ার অনেকে গানটি দেখে খুনি হেলালকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ছয় মাসের চেষ্টায় র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করলো অবশেষে।

র‌্যাব জানায়, হেলালের বিরুদ্ধে যে ৩টি হত্যা মামলা রয়েছে, সবগুলোই বগুড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। হেলাল বগুড়ার একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা, ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি তিনি। এছাড়া ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি ছাড়াও ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে তিনি গ্রেফতার হন। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়‌‌। ২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে বামহাতে আঘাত পান তিনি এবং একপর্যায়ে বামহাত পঙ্গু হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় এসে হাত লুলা হেলাল নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!