চসিক নির্বাচনে নিজের ‘গুণ্ডাগিরি’ কবুল করলেন এমপি নদভী (ভিডিও)

চান্দগাঁওয়ে একাই নিয়েছিলেন সাতটি কেন্দ্রের দখল!

সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় একাই সাতটি কেন্দ্র দখলে নিয়েছিলেন। এমনভাবে নিয়েছিলেন তার মতো একজন মাওলানাকে অনেকে ‘গুণ্ডা-সন্ত্রাসী’ হিসেবেই ডাকছিল— এমন স্বীকারোক্তি দিলেন প্রকাশ্য সভায়। এবারও ‘নিজের সর্বোচ্চ’ দিয়ে বাদলের শূন্য চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমদকে জিতিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত এই সাংসদ।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর লালখান বাজারস্থ মোছলেম উদ্দীনের বাসভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভাতে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী নিজেই এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ সময় প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ জেলার সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের প্রত্যেকে কিছুক্ষণের জন্য হতচকিত হয়ে যান। কাউকে কাউকে হাসতেও দেখা যায়।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা এক ভিডিওতে শোনা যায় সাতকানিয়ার এমপি আবু রেজা নদভী বলছেন, ‘আমরা সবাই কাজ করবো উনার জন্য। বোয়ালখালীতেও যাব, এবং চান্দগাঁও এরিয়াতেও আমি যাব। চান্দগাঁও এরিয়া যেহেতু আমার এরিয়া, আমি ওখানে থাকি। ইনশাল্লাহ আমরা একসাথে কাজ করব। …ইনশাল্লাহ আমরা চান্দগাঁও এলাকায় থাকব। আ জ ম নাছির সাহেবের নির্বাচনের জন্য চান্দগাঁও সাতটি কেন্দ্র আমি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলাম। সাতটি কেন্দ্র এমনভাবে নিয়ন্ত্রণে নিছিল, তখন নদভী সাহেবকে তো আলেম মনে করতাম, উনি তো সন্ত্রাসী বোধহয়। কয় দে উনি তো গুণ্ডা সন্ত্রাসী, আলেম মনে করতাম।’

এমপি আবু রেজা নদভী বলছেন, ‘আমরাও ইনশাল্লাহ কাজ করবো। চান্দগাঁওতে কাজ করব, বোয়ালখালীতে কাজ করব। এবং বোয়ালখালীতে আলেম-ওলামাদের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। আলেম-ওলামাদের সাথে অলরেডি আমি কথা বলেছি। যেভাবে আমাদের নেতৃবৃন্দ নির্দেশনা দেয় সেভাবে আমরা কাজ করবো ইনশাল্লাহ। এবং মোছলেম ভাইকে ইনশাল্লাহ আমরা এমপি বানায়ে সংসদে ইনশাল্লাহ নিয়ে আসব।’

গত সংসদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল বিএনপির। তাদের দাবি ছিল সরকারদলীয় প্রার্থী জোর করে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়েছে। যদিও বা সরকার পক্ষ থেকে তা বারবার অস্বীকার করছিল। এমনকি চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থী ছাড়াও বিএনপি নেতাদের আশংকা— নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা? এমনই সময়ে এমপি নদভীর এই বক্তব্য সামনে আসলো।

উপ-নির্বাচনে দুই প্রধান প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ দলীয় প্রতীক নৌকা ও বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করবেন। বাকিদের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ টেলিভিশন প্রতীক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ চেয়ার প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক আপেল ও ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত কুঁড়েঘর প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরণদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৮৯টি।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!