৫ কোটি টাকার কাজ যেভাবে হাতিয়ে নেন এলজিইডির প্রকৌশলী

৫ মাস ধরে চলছিল দরপত্রবিহীন কাজ

দরপত্র ছাড়া ৫ কোটি টাকার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন কক্সবাজার এলজিইডির এক নির্বাহী প্রকৌশলী। পুরো কাজটিই তিনি করেছেন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই।

হটলাইনে দেওয়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুসন্ধানে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা। এতে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

অভিযুক্ত এই প্রকৌশলীর নাম আনিছুর রহমান। তিনি কক্সবাজার জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর হটলাইন ১০৬ এ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের অভিযোগ পেয়ে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল এলাকায় অভিযানে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম। এ সময় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমানের অনিয়মের সত্যতা পান দুদকের কর্মকর্তারা। পরে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে দরপত্র আহ্বান করার নথিপত্র সংগ্রহ করেন। নথিতে দেখা যায় গত ৫ মাস ধরে চলছে এ প্রকল্পের কাজ।

দুদকের অভিযানের পর তড়িঘড়ি করে ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) ওয়েবসাইটে দরপত্র আহ্বান করে কক্সবাজার জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

দরপত্রে উল্লেখ করা হয়, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জেটিঘাট থেকে প্রকল্প অফিস পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণকাজ। কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর উপর কস্তুরীঘাটে ৫৯৫ দশমিক শূন্য মিটার দীর্ঘ পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কৃষ্ঠের দোকান থেকে সালেহ আহমদ কোম্পানি পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

সূত্র বলছে, কক্সবাজার সদর থানার খুরুশকুল এলাকায় ৪ হাজার ৪০৯ ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেখানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিনোদন ও পার্ক নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমিতে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সেখানে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম না মেনে এককভাবে ৫ কোটি টাকা একটি রাস্তার নির্মাণকাজ বাগিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করেন নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান। ৫ মাস ধরে তিনি এ প্রকল্পের কাজটি করছেন। এ ঘটনার রিপোর্ট তদন্তের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হবে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, ‘আড়াই কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস। ইতোমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে এটির ই-টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে ঠিকাদারও সিলেকশান করা হয়। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কালভার্ট নির্মাণসহ সড়কের অবকঠামো উন্নয়নের যাবতীয় কাজ।’

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার। কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৯৯৭ সালে প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর প্রায় আড়াই লাখ গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ করার জন্য ২০১০ সালে এ প্রকল্পের কাজ অনুমোদন দেয় সরকার। ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বেশ কয়েকটি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

মুআ/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!