চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১১ উপগ্রুপের কোন্দলে ১৬৩ সংঘর্ষ

হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের সংঘর্ষ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চবি ছাত্রলীগের ১১ উপগ্রুপের কোন্দলে ‘পান থেকে চুন খসলেই’ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তারা। গত দু’মাসে অন্তত ১১ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে উপগ্রুপগুলো। আর গত পাঁচ বছরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অন্তত ১৬৩ বার।

এই ধরনের সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন কাজ থেকে চাঁদাবাজি। সংঘর্ষে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা, তেমনি নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। সংঘাতের কারণে প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া পড়াশোনায়ও সমস্যা হয়। এমতাবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হচ্ছেন হল ছাড়তে।

জানা গেছে, চবি ছাত্রলীগ ১১টি উপগ্রুপে বিভক্ত। সবগুলো গ্রুপই আবার দুই নেতার অনুসারী। বিজয় এবং সিএফসি নামে দুই গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী। সিক্সটি নাইন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, এপিটাফ, বাংলার মুখ, রেড সিগন্যাল, উল্কা, একাকার ও স্বাধীনতা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী। এছাড়া নওফেল অনুসারী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে আরও বিভক্তি।

আর এসব গ্রুপ-উপগ্রুপ প্রতিনিয়ত লিপ্ত হয় সংঘর্ষে। কথা কাটাকাটি, হলের সিট বা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এসব সংঘর্ষ। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে বিরাট আকারে। গত দু’মাসে ছাত্রলীগ ১১ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এছাড়া বিগত ৫ বছরের ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়ায় অন্তত ১৬৩ বার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বেশিরভাগই সংঘর্ষের সূত্রপাত নওফেল অনুসারীদের বিবাদের কারণে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ অপকর্মের জেরে ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এদিকে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত চার মাসে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক বিভিন্ন হল ছেড়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। এতে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যেটি নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ছয় বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সিট বরাদ্দ দেয়নি। বার বার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের হল নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই। ফলে তারা আর হলে থাকতে চায় না। হলে থাকতে হলে রাজনীতি করতে হবে, না হয় বেরিয়ে যেতে হবে—এমন অলিখিত প্রথা ছাত্রলীগ নেতাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি প্রথম বর্ষ থেকেই হলে উঠেছিলাম। প্রথম বর্ষে মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়ার বিষয়ে বড় ভাইয়েরা তেমন তাগিদ দেয়নি। তবে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে যাওয়া অনেকটা বাধ্য করেছে তারা। তাই আমি এখন হল ছেড়ে ক্যাম্পাসে বাসা নিয়েছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো ভেঙে সবাই একত্রিত করতে। তবে কিছু ব্যক্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিল যে, ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষের আগে কোনো শিক্ষার্থী হলে থাকলে দ্রুত ছেড়ে দিতে হবে। তা যদি সঠিকভাবে পালন করা হয়, তাহলে নতুন শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য সিট বরাদ্দ দেওয়া।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপগ্রুপগুলো একই প্ল্যাটফর্মে আনতে আমার চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। তবে নওফেল গ্রুপের অনুসারীদের ‘ভুল ধারণা’র কারণে আর একত্রিত করা যায়নি।’

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের বারবার সংঘর্ষ ও সিট বরাদ্দ না থাকায় এসব শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে দিচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। প্রশাসনের উচিত ছাত্রলীগের অপকর্মকে প্রতিহত করে দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করা।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘এই বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!