চট্টগ্রামে সরকারি জায়গায় পার্কিং বানিয়ে মাইক্রো চালক সমিতি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা

যানজটে করুণ দশা পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জে, হয়রানিতে সাধারণ মানুষ

সরকারি জায়গা দখল করে পার্কিং বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চট্টগ্রামের কাতালগঞ্জ মাইক্রোবাসচালক কল্যাণ সমিতি নামের একটি সংগঠন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) যৌথ মালিকানায় থাকা প্রায় এক একর জায়গার উপর পার্কিং বাণিজ্য করে আসছে সংগঠনটি। ৫০ শতক এ জায়গার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের জায়গা ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়ে আসলেও সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি এক টাকাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংগঠনটির নামে প্রতিটি গাড়ির চালকদের কাছ থেকে মাসিক তিন হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। ওই সংগঠনে শতাধিক সদস্য রয়েছে। সংগঠনটিতে নতুন সদস্য হতে হলে দিতে হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এভাবে বছরে অর্ধকোটির বেশি টাকা আদায় করে সংগঠনটি। এই সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে এসব দখলদারিত্ব চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

চট্টগ্রামে সরকারি জায়গায় পার্কিং বানিয়ে মাইক্রো চালক সমিতি হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা 1

কাতালগঞ্জের ওই জায়গা ছাড়াও ফুটপাত, রাস্তার ওপর সারি সারি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার পার্কিং করে রাখা হয়। এসব মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের কারণে রাস্তায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে। রাস্তার পাশের জায়গাতেও গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। প্রায় দুই দশক ধরে এমন দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি চললেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। অথচ চোখ দূরত্বের মোড়েই রয়েছে পাঁচলাইশ থানা।

চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পাঁচলাইশ ও কাতালগঞ্জে এমন দখলদারিত্ব চলে আসলেও কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর রোডের বিপরীত পাশ থেকে পাঁচলাইশ মোড় পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাতের উপর প্রায় শতাধিক গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। কাতালগঞ্জ মোড়ে পার্কভিউ হাসপাতাল ও ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার হওয়ার ফলে আগের তুলনায় সেখানে গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। যার ফলে সবসময় যানজট লেগে থাকে ওই এলাকায়। টাকার বিনিময়ে পুলিশের যোগসাজসে এই অনিয়ম হয়ে আসছে বলে জানায় একাধিক মাইক্রোবাস চালক।

বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না দিয়ে গাড়ি পার্কিং করা যায় না। ওই সংগঠনের বাইরে থাকলেও তারা (সংগঠনের নেতারা) যাত্রী নিতে দেয় না। জিম্মি করেই চালকদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সংগঠনের নেতারা।

তবে কাতালগঞ্জ মাইক্রোবাসচালক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহিন দাবি করেন, সমিতির নামে ডিসি ট্রাফিকের (উত্তর) কাছ থেকে পার্কিং করার অনুমতি নিয়েছেন তারা।

ডিসি ট্রাফিক (উত্তর) জমি দখলের অনুমতি দিতে পারেন কিনা— প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহিন বলেন, জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমরা লিজ নেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান মালিক হওয়ায় এই জমি নিয়ে আইনি জটিলতা আছে।

জমি ব্যবহারের কোনো বৈধ অনুমোদন না থাকার কথা স্বীকার তিনি।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহিন বলেন, তিন হাজার টাকা আদায়ের বিষয়টি মিথ্যা। কোনো প্রমাণ দেখাতে পারলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের লাইন খরচ আছে, প্রশাসন খরচ আছে। এগুলোর জন্য সমিতির আইন অনুযায়ী টাকা নেওয়া হয়।

প্রশাসন খরচ কী, কেন দিতে হয়— এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে আমাদের পক্ষ থেকে গাড়ি দেওয়া হয়। এটাও একপ্রকার জনসেবা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ কাউকে স্ট্যান্ড বানানোর অনুমোদন দেয়নি। হাসপাতাল এলাকায় রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন গাড়ি আসে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে এক সারিতে অস্থায়ী পার্কিং করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতাল এলাকায় যানজট নিরসনে বিশেষ বিবেচনায় পার্কভিউ হাসপাতালের বিপরীতে এক সারিতে গাড়ি পার্কিং করার অনুমতি দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ। কিন্তু সেখানেও সাধারণ মানুষের গাড়ি পার্কিং করতে পারে না ওই সমিতির গাড়িগুলোর কারণে। রাস্তা দখল করে পার্কিং বানানোর পাশাপাশি সেখানে আড্ডা দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে টংয়ের দোকান।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ হাসান বলেন, মাইক্রোবাস ও কার পার্কিং করে রাস্তা দখল করে আসছে তারা। এ কারণে সারাদিন যানজট লেগেই থাকে। অথচ প্রশাসন ঘুমিয়ে আছে।

এছাড়া পার্কভিউ হাসপাতাল ও ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবা নিতে আসা রোগীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। আশেপাশে কোনো ভাড়া দেওয়ার গাড়ি না থাকার কারণে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকায় তারা।

পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রাঙ্গামাটির সাইদুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আম্মার অপারেশন শেষে ঘরে নিয়ে যেতে গাড়ি খুঁজতে গেলাম। সেখানে (কাতালগঞ্জ) দাম চাইলো ৯ হাজার টাকা। অস্বাভাবিক দাম শুনে লালদিঘির পাড়ে গিয়ে ৪ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করেছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!