চট্টগ্রামে সড়ক দখলে নিয়ে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা, অসহনীয় যানজট কেইপিজেড পকেট গেটে

নেই ফুটওভার ব্রিজ, ঝুঁকি নিয়ে চলছেন গার্মেন্টসকর্মীরা

চট্টগ্রাম নগরীর স্টিল মিলস বাজারের কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) মূল ফটক থেকে পকেট গেট এলাকা পর্যন্ত যানজটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এতে অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। এই পথে ১০-১৫ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। ফলে নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা। এছাড়া অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতেও বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এই সড়কের অধিকাংশ দখল করে রাখে গণপরিবহন। যাত্রী তুলতে এসব গণপরিবহনের রেষারেষির কারণেই সকাল-বিকাল লেগে থাকে যানজট। গার্মেন্টস ছুটি হলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। ৫০০ গজ দূরত্বে ট্রাফিক পুলিশ বক্স থাকলে তাদের দেখা যায় না যানজট নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া এই এলাকায় নেই ফুটওভার ব্রিজ। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হয় গার্মেন্টসকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

তবে স্থানীয়রা জানান, তিনটি কারণে কেইপিজেডের মূল ফটক ও পকেট গেটের সামনে ভয়াবহ যানজট হয় প্রতিদিন। একইসঙ্গে এইখানে ফুটওভার ব্রিজেরও দরকার।

সরজমিনে কেইপিজেড পকেট গেটে গিয়ে দেখা গেছে, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। অন্যদিকে সড়ক দখল করে অধিক যাত্রী পাওয়ার আশায় কারণে-অকারণে ৬, ১০ ও ১১ নম্বর লোকাল গাড়িগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। পুরো সড়ক দখল করে বাস চালকেরা ‘কার চেয়ে কে বেশি যাত্রি নেবে’ সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এছাড়া একই সিরিয়ালের গাড়ি যেন অপরটিকে ওভারটেক করে যাত্রী নিতে না পারে সেজন্য সড়কে আড়াআড়িভাবে রাখা হয় গাড়ি।

আরও দেখা গেছে, ফুটপাতও হকারদের দখলে। হকারদের পণ্যের পসরা, সড়কের ওপর বাজারের কারণে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে সমস্যায় পরতে হচ্ছে পথচারীদের। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অফিস ছুটির সময়ে কেইপিজেড পকেট গেটে লোকাল বাসে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা, শ্রমিকদের সরাসরি রাস্তা পারাপার এবং সড়কে যানজট নিরসনে নেই ট্রাফিক পুলিশ। এজন্য এখানে যানজট লেগেই থাকে। আর গার্মেন্টস ছুটির পর কর্মীদের পারাপারের জন্য নেই কোনো ফুটওভার ব্রিজও।

‘পতেঙ্গা নাগরিক পরিষদ’র সদস্য সচিব ওয়াহিদ হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যানজটের চিত্র শুধু কেইপিজেড মূল ফটক কিংবা পকেট গেটে যে হচ্ছে তা নয়। কাটগড় মোড়েও ভয়াবহ অবস্থা। গাড়ির উচ্চ শব্দের হর্নের কারণে পতেঙ্গা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারে না।’

কেইপিজেড’র একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন মো. কামাল। তিনি বলেন, ‘অফিসের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য ও সময় বাঁচাতে বাসা নিয়েছি আকমল আলী রোডে। সকাল-সন্ধ্যা পকেট গেট দিয়েই অফিসে যাওয়া-আসা করি। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে একসঙ্গে অনেক মানুষ রাস্তা পার হতে গিয়ে ভয় লাগে, কখন গাড়ির নিচে চাপা পড়ি। গাড়ি থামলে কিংবা আস্তে চলা অবস্থায় আমরা গাড়ির ফাঁক-ফোড়ক দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছি। ফ্রি-পোর্টের মত এখানেও একটা ফুটওভার ব্রিজ দরকার।’

আয়শা বেগম নামের স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘কেইপিজেডে কর্মরত হাজার হাজার গার্মেন্টসকর্মীরা প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পকেট গেট ব্যবহার করে। সময় বাঁচাতে গিয়ে গার্মেন্টসকর্মীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। এখানে কোনও ফুটওভার ব্রিজ নেই। সড়কের বড় অংশজুড়ে লোকাল ও দূরপাল্লার গাড়িগুলো ইচ্ছামতো পার্কিং করে থাকে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের এগিয়ে আসা জরুরি। যানজটের কারণে কাটগড় থেকে বন্দরটিলা যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।’

এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না, আমার নলেজে নেই।’

যানজটের বিষয়ে সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যা চলমান রয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে পরিবহন সেক্টরে যারা আছেন তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। গার্মেন্টস ছুটি হলে যানজট সৃষ্টি হয়। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে রাস্তায় যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়।’

সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি সকাল ৭ টা থেকে ৯টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিস যাওয়া বা ছুটির সময় ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের জনস্রোত দেখা যায়। সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদরা ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের নির্বিঘ্নে চলাচলের কথা চিন্তা করে এবং যানজট এড়াতে ফ্লাইওভার ব্রিজের র্যা ম জিইএম গেটের পর দিচ্ছে। বেপজা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, শ্রমিকদের চলাচলের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা।’

তিনি বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমাদের বাজেট নেই। শ্রমিকদের স্বার্থে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করবে বেপজা কর্তৃপক্ষ। তবে যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে শ্রমিকদের সরাসরি রাস্তা পারাপারের জন্য মিডেল সাইট বন্ধ করতে হবে।’

পতেঙ্গার কেইপিজেড’র নির্বাহী পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ফুটওভার ব্রিজের বিষয়টি জানিয়েছি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১০ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে আমাদের ১ নম্বর কেইপিজেড পকেট গেটেও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সয়েল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এখানে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারবে কেইপিজেডের কর্মরত শ্রমিকরা।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!