বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের প্যারেড মাঠে সিটি কর্পোরেশনের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ২১টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরা সবাই চট্টগাম কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের শিক্ষার্থী। তবে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও উদ্ধার হয়নি মোবাইল।
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন রোভার স্কাউটের শিক্ষার্থীরা প্যারেড মাঠে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করার সময় শিক্ষার্থীরা একই কলেজের দাঁড়িয়ে থাকা অপর একজন মেয়ের কাছে মোবাইলসহ ব্যাগ রেখে যান। এসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস নুরীও ওই মেয়েটিকে ব্যাগগুলো দেখভাল করার জন্য বলেন।
পারফরম্যান্স শেষে শিক্ষার্থীরা এসে ব্যাগ ও মোবাইলগুলো খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ব্যাগে অন্তত ২১ টি মোবাইল ছিল যারমধ্যে অন্তত ৪টি আইফোন ছিল। এসব মোবাইলের মূল্য প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রতিবেদকের। তবে কেউ নাম প্রকাশে ইচ্ছুক হয়নি।
শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে প্যারেড মাঠে আমাদের কলেজের রোভার স্কাউটের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। আমরা যখন অনুষ্ঠানে অংশ নিই, তখন মোবাইলগুলো একটা ব্যাগে রাখি। সেখানে প্রথম বর্ষের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের মেডাম মেয়েটিকে ব্যাগগুলো দেখভাল করতে বলে চলে যান। পারফরম্যান্স শেষে এসে দেখি, আমাদের মোবাইলগুলোসহ ব্যাগ নেই। সেখানে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি মোবাইলসহ ব্যাগটি।
তারা আরও বলেন, সন্দেহজনক মেয়েটিকে বারবার জিজ্ঞেস করার পরও মেয়েটি ব্যাগ দেখেনি জানিয়ে ব্যাগ দেখে রাখার দায়িত্ব অস্বীকার করে। তবে মেয়েটি কিন্তু জানতো, ওই ব্যাগে যে মোবাইল ছিল।
এ প্রসঙ্গে প্যারেড মাঠে দায়িত্বরত কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস নুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সেদিন শিক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারপরও শিক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে আসে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে আমি ছিলাম। শিক্ষার্থীরা যখন অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করতে যাচ্ছিল তখন তারা মোবাইলগুলো একটা ব্যাগে রাখে, সেখানে আরও অনেকগুলো ব্যাগ ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের কলেজের একটি মেয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। শিক্ষার্থীরা সেই মেয়েটিকে ব্যাগগুলো দেখতে বলে। পরে আমিও ওই মেয়েটিকে বলেছি, শিক্ষার্থীদের ব্যাগসহ মোবাইলগুলো দেখে রাখার জন্য। এরপর নাকি মেয়েটিও আমার পেছন পেছন চলে যায়। পরে সেখান থেকে ব্যাগগুলো হারিয়ে যায়।
এ ঘটনায় চকবাজার থানা একটি জিডি করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস নুরী।
কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যে অনুষ্ঠানটি প্যারেড মাঠে হয়েছিল, সেটি আসলে কেন্দ্রীয়ভাবে হয়ে থাকে। আমাদের কলেজ সেখানে অংশ নিয়েছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা সেখানে পারফর্ম করেছে। তাদের যথারীতি মোবাইল না নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তারপরও অনেকে মোবাইল নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীরা ব্যাগে মোবাইলগুলো রেখে ব্যাগটি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে যায় দেখভালের জন্য। এর মধ্যেই ব্যাগগুলো মিসিং হয়ে যায়।
অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনার পর আমরা চকবাজার থানায় জিডি করেছি, প্রশাসনকে জানিয়েছি। তবে একসঙ্গে এতগুলো মোবাইলে এভাবে হারিয়ে যাওয়া, আমাদের জন্য দুঃখজনক। সন্দেহজনক ওই মেয়েটিকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু মেয়েটি সঠিকভাবে কখন ব্যাগ হারিয়ে গিয়েছে, কিছুই বলতে পারছে না। মেয়েটি একেক সময় একেক কথা বলছে।
এআইটি/ডিজে