চট্টগ্রামে নারী ডাক্তার গ্রেপ্তার, কিশোরী গৃহকর্মীকে অকথ্য অত্যাচার পাঁচদিন ধরে

কিশোরী গৃহকর্মীকে টানা পাঁচদিন ধরে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রামের এক নারী চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই কিশোরী গৃহকর্মীর অপরাধ, সে তার গৃহকর্ত্রী ওই চিকিৎসকের কাজল দিয়ে চোখে সজ্জা এঁকেছিল।

গৃহকর্মীর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার মোহরায় ওই নারী চিকিৎসকের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে নির্যাতিত গৃহকর্মীকে উদ্ধারের পাশাপাশি চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৩৪ বছর বয়সী ওই চিকিৎসকের নাম নাহিদা আক্তার রেনু। তিনি চান্দগাঁওয়ের মোহরার বালুরটাল এলাকার ইউনুস কোম্পানির পুত্র রফিকুল হাসানের স্ত্রী। ডা. নাহিদার শ্বশুরবাড়ি মোহরায় হলেও তিনি থাকেন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ৩৯৪ নম্বর বাসায়।

১৫ বছর বয়সী নির্যাতিত ওই গৃহকর্মীর নাম তসলিমা আক্তার। সে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আব্দুল গণির মেয়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে বাবা আবদুল গণি বাদি হয়ে চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৩ জুলাই তার মেয়ে তসলিমা ডা. নাহিদার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। তবে গত তিন মাস ধরে মেয়ের আর কোনো খোঁজখবর তারা পাচ্ছিলেন না। এমনকি লোহাগাড়া থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় গিয়েও মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারছিলেন না তিনি।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) ডাক্তার নাহিদার চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় গেলে তাসলিমার বাবাকে জানানো হয়, সে বাসায় নেই। এমন কথায় সন্দেহ হলে তাসলিমার বাবা ওই বাসার জানালা দিয়ে উঁকি মেরে মেয়েকে দেখতে পান। তাসলিমা এ সময় ইঙ্গিতে তার ওপর নির্যাতন জানানো হচ্ছে বলে বাবাকে জানানোর চেষ্টা করে।

এরপরই তাসলিমার বাবা আবদুল গণি চান্দগাঁও থানা পুলিশের শরণাপন্ন হন। প্রায় দুই ঘন্টা পর পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাসলিমা উদ্ধার করার পাশাপাশি ডাক্তার নাহিদাকেও গ্রেপ্তার করে।

নির্যাতনের শিকার তাসলিমা পরে পুলিশকে জানায়, গত ১৮ জুলাই রুম ঝাড়ু দেওয়ার সময় সে একটি কাজল খুঁজে পায় ঘরের মেঝেতে। পরে সেটি নিয়ে নিজের চোখে সজ্জা আঁকে।

বাসায় ফিরে গৃহকর্মীর চোখে কাজল আঁকা দেখতে পেয়ে সেই রাতেই গৃহকর্মী তাসলিমাকে প্রচণ্ড মারধর করা ছাড়াও তার গলা টিপে ধরেন ডা. নাহিদা। ডা. নাহিদার শিশুসন্তান গৃহকর্মী তাসলিমার মাথায় হাত লাগিয়ে সেই আঙ্গুল আবার মুখে দেয় বলে শাস্তি হিসেবে একটি সেলুনে নিয়ে গিয়ে তাসলিমার চুলও ফেলে দেওয়া হয়।

তাসলিমা জানায়, গত তিন মাস ধরেই তার ওপর একের পর এক নির্যাতন চলছিল। কিল-ঘুষি-থাপ্পড় ছিল ডা. নাহিদার প্রতিদিনের রুটিন কাজ। এ সময় থেকে তার বাবা-মার সঙ্গে মোবাইলেও কথা বলতে দেওয়া হতো না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!