সম্পদের পাহাড়/ চট্টগ্রামে দুদকের জালে স্ত্রীসহ পুলিশের এএসপি

দুই বছর কাজ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনেও

সহকারী পুলিশ সুপার পদের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বহুতল ভবনসহ বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মিলেছে আয়ের উৎস বর্হিভূত সম্পদ রাখার তথ্য।

২০১৭ সালে দুদকের হটলাইনে (১০৬) আসা এক ফোনকলের সূত্র ধরে এএসপি আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আবুল হাশেম বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) হিসেবে কর্মরত। চট্টগ্রামের রাউজানের গশ্চিতে তার গ্রামের বাড়ি।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার উত্তর খুলশী পলিটেকনিক কলেজ রোডের রূপসী আবাসিক এলাকায় আবুল হাশেম সাড়ে পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে গড়ে তুলেছেন চারতলাবিশিষ্ট সুরম্য ভবন। সেখানে আটটি সেমি পাকা টিনশেড পাকাঘরও দেখা যায়।

পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে গড়ে তুলেছেন চারতলাবিশিষ্ট সুরম্য ভবন
পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে গড়ে তুলেছেন চারতলাবিশিষ্ট সুরম্য ভবন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম ২০১০-২০১১ থেকে ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে আয়কর নথিপত্রে বৈধ আয় দেখান ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ টাকা। কর পরিশোধসহ তার পারিবারিক ব্যয় ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে মোট আয় খরচ বাদ দিলে দাঁড়ায় ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ১৭৩ টাকা। এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অর্জনের খোঁজ পাওয়া যায় এক কোটি দুই লাখ ৩৭ হাজার ৪১৩ টাকা। এখানে মোট আয় বাদ দিলে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৮৫ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০৫-২০০৬ থেকে ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের আয়কর নথিপত্রে বৈধ আয় দেখানো হয় ৮৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩০২ টাকা। কর পরিশোধসহ তার পারিবারিক ব্যয় ৮ লাখ ২২ হাজার ৫০ টাকা। এক্ষেত্রে মোট আয় থেকে খরচ বাদ দিলে দাঁড়ায় ৮১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫২ টাকা। অপরদিকে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে এক কোটি এক লাখ ৬ হাজার ৭৯৬ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। ওই টাকা থেকে মোট আয় বাদ দিলে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৪ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায় তার বিরুদ্ধে।

এএসপি আবুল হাশেম ও তার স্ত্রীর আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ উপ সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) আবুল হাশেম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কে বা কারা ১০৬ নম্বরে কল দিয়ে আমার বিরুদ্ধে দুদককে নামিয়ে দিয়েছে। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমরা সরকারকে প্রতিবছর আয়কর প্রদান করি। এখানে অন্য কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

আবুল হাশেম সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই বছর দুর্নীতি দমন কমিশনে কাজ করেছিলেন। দুই বছর খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানায় তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এরপর কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানায় দেড় বছর দায়িত্ব আবার খাগড়াছড়ি জেলায় গোয়েন্দা পুলিশেও প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত আড়াই বছর ধরে চট্টগ্রাম জেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবুল হাশেম। তার চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবির এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনে আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে তদন্ত করেছেন দুদকের এক কর্মকর্তা। পরে এর দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়।’ দাখিলকৃত অবৈধ সম্পদের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘এর আগে ১০৬ নম্বরের হটলাইনে আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসাব দাখিল করার আদেশ পায়। এরপর এক উপসহকারী পরিচালক এটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের একটি বিবরণী দাখিল করেন।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) মো. আবুল হাশেম এবং তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের সম্পদের বিবরণ দাখিলের নোটিশ দেয় দুদক। এরপর ২৯ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেন। অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন উপ সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!