চট্টগ্রামে উচ্ছেদের ৭ মাস না পেরোতেই রেলের জায়গা ফের দখল

অপরাধীদের দৌরাত্ম্য, চলছে মাদক বিক্রিও

উচ্ছেদের ছয় মাস না পেরোতেই আবারও দখল হয়ে গেছে রেলওয়ের জায়গা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর স্ক্র্যাপ কলোনিতে ১ দশমিক ১ একর জায়গা আবারও আস্তানা গড়ে তুলেছে অবৈধ দখলদাররা। এসব জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হলেও তারাও এই ব্যাপারে উদাসীন। উচ্ছেদের পর এসব জায়গা রক্ষায় তদারকি নেই রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগেরও। তারা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে আরএনবিকে ‘দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার’ নির্দেশনা দিয়েই দায় সারছেন।

চট্টগ্রামে উচ্ছেদের ৭ মাস না পেরোতেই রেলের জায়গা ফের দখল 1

এর আগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রেলের এই জায়গায় অবৈধ স্থাপনা ও ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়।

জানা গেছে, রেলের এই জায়গার দেখভাল করার দায়িত্ব আরএনবির। এখানে মাস্টার লেন, পাঞ্জাবি লেন ও সিগন্যাল কলোনি এলাকা তিন থানার অন্তর্ভুক্ত। তাই এক এলাকায় অপরাধ করে অন্য এলাকায় গিয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। স্ক্র্যাপ কলোনি হিসেবে পরিচিত এই জায়গা মাদক বিক্রি ও সেবীদের অন্যতম স্থান। এখানে গড়ে ওঠা বস্তিতে চুরি, ছিনতাই থেকে শুরু করে নবজাতক বিক্রির মতো কাজও হয়।

এছাড়া সংবাদকর্মীর ওপর হামলা ও পুলিশকে কোপানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে এই এলাকায়।

এসবে অতিষ্ঠ হয়ে পাহাড়তলীর স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধনও করেছেন এলাকায়। কিন্তু এরপরও টনক নড়ছে না প্রশাসনের।

সম্প্রতি সরেজমিন পাহাড়তলী পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে, আকবরশাহ থানা এলাকার রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা সেই স্ক্র্যাপ কলোনি গিয়ে দেখা গেছে, ফের গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ঘর-বাড়ি। টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ ঘর ভাড়াও দেওয়া হয়েছে।

আরও জানা গেছে, বস্তিটি নিয়ন্ত্রণ করেন সিএমপির তালিকাভুক্ত মাদককারবারি ফাতেমা ও রিকশা চোরচক্রের মূলহোতা জয়নাল এবং তার বাহিনী। শাহ আলম, জসিম, গুরা বেলাল, মনা এই বাহিনীর সদস্য। রেলের লোহা চুরিতেও জড়িত এই চক্র। এছাড়া ফাতেমা ও জয়নাল বাহিনীর অন্য সদস্যরা হলেন শাকিল, শাহ আলম, নুরনবী, কালি রাবেয়া ও নুরা। এদের প্রত্যেকে পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলা মামলার আসামি। এছাড়া শিশু বিক্রির সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা হলেন কোহিনূর, রাবেয়া, তৃষা ও জোছনা।

২০০১ সালে পাহাড়তলীর স্ক্র্যাপ কলোনি ও আকবরশাহের নিউ শহীদ লেন বিহারি কলোনিতে মাদক ব্যবসা শুরু করেন ফাতেমা। এরপর তার সঙ্গে যোগ দেন জয়নাল। এভাবে তারা পুরো এলাকায় গড়ে তোলেন মাদক বাণিজ্য।

২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল রাতে ছিনতাই হওয়া ফোন উদ্ধারে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম এই বস্তিতে ঢুকলে তাদের ওপর হামলা করে ফাতেমা-জয়নাল বাহিনী। অভিযানে ফাতেমাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও পালিয়ে যান জয়নাল। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আকবরশাহ থানার দুই এসআই ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আনার পথে তাদের কুপিয়ে আসামি ছিনতাই করেন ফাতেমা-জয়নালের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। পরে অভিযান চালিয়ে হ্যান্ড কাপটি উদ্ধার করা হয়।

২০২০ সালের ২৬ এপ্রিল রিকশা গ্যারেজ থেকে ১৮টি চুরি হওয়া রিকশাসহ জয়নালকে গ্রেপ্তার করে খুলশী থানা পুলিশ।

এছাড়া গত বছরের ২২ নভেম্বর গ্যারেজের ভেতর মাদক বিক্রি ও সেবনে বাধা দিলে মাস্টার লেন এলাকার মহিউদ্দিন ইব্রাহিম রশীদি (২৭) নামের এক যুবককে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় খুলশী থানায় জয়নালসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

আরাফাত নামের এক মামলার বাদি জানান, ‘জয়নালের স্ত্রী শ্যামলা বেগম উল্টো খুলশী ফাঁড়ি ইনচার্জ খাজা এনাম, আমি ও অপর এক ব্যক্রির বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১০ জুন সহকারী পুলিশ কমিশনার (বায়েজিদ জোন) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে আমাদের ২৭ জুন ডাকা হয়।’

জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে আরএনবির অস্ত্র শাখার সিআই রেজয়ানুর রহমান অফিস থেকে দূরত্ব বেশি হওয়াকে দায়ী করেন।

অবৈধ স্থাপনা ফের দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিভাগীয় কর্ম ব্যবস্থাপক (পূর্ব) আবিদুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় ভূসম্পদ দপ্তর ও আরএনবিকে বলবো।’

অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে আকবরশাহ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন বলেন, ‘অপরাধীদের ফের বস্তিতে অবস্থানের বিষয়টি জেনেছি। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে আমার পুলিশ ও খুলশী ফাঁড়ি ইনচার্জকে অভিযান পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!