চট্টগ্রামে অপরাধে হাত বাড়াচ্ছে ‘সানি গ্রুপ’, দলবেঁধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অলিগলিতে

চট্টগ্রাম নগরীতে মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে মাদকসেবীরা। এছাড়া এসব বখাটের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। আর এদের পুলিশে ধরলেই মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মিনহাজুল ইসলাম সানি। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক।

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকার মোহাম্মদপুরে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যসোসিয়েশন’ নামের মাদকবিরোধী এক সংগঠনের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সানিসহ তার ছত্রছায়ায় থাকা কিছু বখাটে এই হামলা চালায়।

এ ঘটনার পর গত রোববার (৫ নভেম্বর) ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামের মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আকিল ইবনে হাবীব নগরের চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

অভিযোগ তিনি উল্লেখ করেন, সংগঠনের মাদকবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন সানি। সেদিন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে চকবাজার থানার সিডিএ কলোনির পাশে একটি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সময় সানি উত্তেজিত হয়ে আকিলের কলার চেপে ধরেন। এছাড়া তাকে এলোপাথাড়ি মারধরও করেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাঁচলাইশ ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি মীর জিহান আলী খাঁন (৩০) ও চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ (২৮) আকিলকে উদ্ধার করেন।

পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় মহড়া দেয় সানির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা তার ফুফাতো ভাই আদনান খুরশীদ দিগন্ত (২৩), মো. সজীব (২৪) ও মামুনসহ আরো বেশ কিছু কিশোর।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোনের জামাইয়ের সঙ্গে জোট বেঁধে এক ওমানপ্রবাসীর দেওয়া ২৭ ভরি স্বর্ণ মেরে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন মিনহাজুল ইসলাম সানির অনুসারী পাঁচলাইশ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির। এছাড়া তার ফুফাতো ভাই আদনান খুরশীদ দিগন্তের বিরুদ্ধে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় রয়েছে অস্ত্র মামলা। সজীবও একই মামলায় অভিযুক্ত। সেসময় তারা নগরীর পাঁচলাইশ থানার প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের সামনে থেকে ডাকাতি প্রস্তুতির সময় র‌্যাবের হাতে আটক হন। এসময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি ছুরি ও খুর উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-৭ এর ডিএডি মো. আব্দুল মতিন বাদি হয়ে মামলা করেন।

অস্ত্র মামলা ছাড়াও মো. সজীবের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অন্তত পাঁচটি মামলা।

জানা গেছে , ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর এলাকার কুতুব ভবনের মাঠে জুয়া খেলতে নিষেধ করায় কয়েকজন যুবকে বেধড়ক মারধরসহ ছুরিকাঘাত করেন সজীব, মামুনসহ আরও ৮ থেকে ১০ জন। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৩০০ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগও করে পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা হয় মামলা। এ মামলায় ছুরিকাঘাতে আহত যুবকের বোন লিমা আক্তার বাদি হন।

২০১৯ সালের ২২ জুন মারধরের অভিযোগে সজীবসহ ছয়জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পাঁচলাইশ থানা পুলিশের এক ড্রাইভার। ওই মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, একই বছরের ২৪ মে জুয়া খেলার সময় সজীবসহ অনেকে থানা পুলিশের হাতে আটক হন। কিন্তু কোনো এক নেতার ছত্রছায়ায় সেদিন তারা থানা হেফাজত থেকে বেরিয়ে আসে।

পরদিন ২৫ মে মুরাদপুরের তিন রাস্তা মোড় এলাকায় পুলিশের সেই গাড়ির ড্রাইভারকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙে দেয়। অভিযুক্তদের দাবি, সেই ড্রাইভার মো. মোশারফ হোসেন তাদের জুয়া খেলার স্থান পুলিশকে দেখিয়ে দিয়েছে। অভিযুক্তদের ভয়ে প্রায় এক মাস পর এ ঘটনায় মামলা করেন সেই পুলিশের ড্রাইভার।

এদিকে ২০২২ সালের ২৭ মে রাস্তার স্ল্যাব চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার দায়ে সজীবসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন মো. আবরারুল আলম রাফি নামের এক ব্যক্তি। সেই মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে শনাক্ত করা সজীবসহ অন্যদের কাছ থেকে স্ল্যাব ফেরত চাইলে মামলার বাদিকে মারধর করেন তারা।

চলতি বছরের ২ আগস্ট খতিবের হাট এলাকায় আদালতে বিচারাধীন এক মামলার জমি দখল করতে গিয়ে মো. ইউসুপ নামের এক ব্যক্তির ঘরে ভাঙচুর ও মারধর করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি ও জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে আসে। এ মামলায় সজীবসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১১ থেকে ১২ জন অজ্ঞাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়েছে।

চলতি বছরের ২৩ জুলাই মো. তৌহিদুল্লাহ নামের এক পানি ব্যবসায়ীকে মোহাম্মদপুর এলাকায় ব্যবসা করতে না দেওয়ার জন্য তার কর্মচারীদের ও তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন সজীবসহ আরও কয়েকজন। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরির পর ছাত্রলীগ নেতা সানি মুচলেকা দিয়ে পুলিশ হেফাজত থেকে সজীবকে ছাড়িয়ে আনেন।

এছাড়া আদনান খুরশীদ দিগন্তের বেশ কিছু মাদক সেবনের ছবিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হতে এসেছে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম সানির সঙ্গে মুঠোফোনে টানা দু’দিন যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

আরএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!