চট্টগ্রামের ভোটে ১২১ প্রার্থীর ৯৭ ভাগই ‘থৌঁচ্ছুয়া’, নগণ্য দলের অচেনা সব প্রার্থী

‘এগিন হনো ভোট না? থৌঁচ্ছুয়া হদগ্গুন তিয়াইয়ে। হারে ভোট দিইয়ুম?’— চট্টগ্রামের ভাষায় এমন প্রশ্ন রেখে থামলেন আনোয়ারার বাসিন্দা শেখ খোরশেদ আলম— সাধু ভাষায় যার অর্থ ‘এটা কোনো ভোট হল? নগণ্য কিছু লোক দাঁড়িয়েছে। কাকে ভোট দেবো?’

ভোটের মাঠের অবস্থা দেখে এমন প্রশ্নের পিঠে পাল্টা প্রশ্ন করা কঠিন। খোরশেদ আলমই শুধু নন, এবারের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনেই এমন প্রশ্ন বারেবারে মিলছে ভোটারদের মুখ থেকে। প্রার্থীতালিকায় চোখ রাখলে সহজেই বোঝা যায়, প্রধানত আওয়ামী লীগ ও কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সামনে দাঁড়াতে পারে—এমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রকৃতপক্ষে নেই। নগণ্য সব দল থেকে অচেনা সব প্রার্থী নির্বাচনে নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তালিকায় নামটুকু ঢুকিয়েছে ঠিক, কিন্তু তাদের কারোরই ভোট টানার সামর্থ্য নেই, এমনকি নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর লোকই নেই। কেউ কেউ বলছেন, এদের বেশিরভাগেরই এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ারও সক্ষমতা নেই। ফলে কয়েকটি আসন বাদে বাকি সব আসনেই ভোটের ফলাফল হবে একতরফা, প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়— এমনটি মনে করছেন অনেক ভোটারই।

চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার মোট ১৬টি সংসদীয় আসনে এবার ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন মোট ১২১ জন প্রার্থী। ভোটের প্রচারণার সঙ্গে প্রার্থীতালিকা বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর মধ্যে ৯৭ ভাগ প্রার্থীই এলাকায় অনেকটা অপরিচিত। কেউ কেউ বলছেন, ছোটখাটো বিভিন্ন দল থেকে দাঁড়ালেও এরা মূলত আওয়ামী লীগেরই ‘নিজস্ব প্রার্থী’। অধিকাংশ প্রার্থী নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য নির্বাচনে নামমাত্র অংশ নিচ্ছেন— এমনই মনে করছেন ভোটারদের অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া এসব প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণাও খুব একটা নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মতো ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হলে এসব প্রার্থীকে পড়তে হতো চরম বেকায়দায়।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে প্রার্থীরা যেসব দল থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), তৃণমূল বিএনপি, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। রয়েছে ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট দল— যেমন ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এছাড়া আরও রয়েছে প্রায় নামসর্বস্ব বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ন্যাশনালিস্ট আওয়ামী পার্টি, ন্যাশনাল পিপসল পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণফোরাম ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মতো দলও।

অন্যদিকে কেবল চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জাতীয় পার্টির  আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মোটামুটি একটা অবস্থান রয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জাতীয় পার্টির সোলাইমান আলম শেঠের নানাভাবে পরিচিতি থাকলেও ভোটের বাজারে তার কদর নেই। নৌকার ওপর ভর করেই তাকে থাকতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

দেখা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী একেবারেই নেই। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা, কোতোয়ালীসহ বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে যারা দাঁড়িয়েছেন, ওই প্রার্থীদের প্রায় সকলেই এলাকায় অপরিচিত। আর এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে শামিল হয়ে ভিআইপি প্রার্থীরা এবার একেবারেই নির্ভার।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)

চট্টগ্রাম-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা সাত প্রার্থীর পাঁচজনকেই খুব একটা চিনেন না এ আসনের ভোটাররা। এখানে প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন— বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. ইউসুফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুরুল করিম আবছার, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মান্নান এবং জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন চৌধুরী।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মাহবুব উর রহমান রুহেল। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)

চট্টগ্রাম-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা আট প্রার্থীর চারজনই এলাকায় অনেকটা অপরিচিত। এখানে প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন— ইসলামিক ফ্রন্টের মীর মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম, জাতীয় পার্টির মো. শফিউল আজম চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের মো. হামিদ উল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান।

অন্যদিকে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী এলাকায় পরিচিত হলেও আওয়ামী লীগের সাহায্য ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো শক্তি তাদের কারোরই নেই। নজিবুল বশর নিজে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেই তিন তিনবার আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার তিনি অনেক নাটকীয়তার পরও শেষমেশ নৌকায় উঠতে পারেননি। ফলে ‘ফুলের মালা’ প্রতীক নিয়েই তাকে ভোট করতে হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে ভোটের লড়াই থেকে তিনি ছিটকে পড়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

ফটিকছড়িতে এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়বের মধ্যে— ধারণা করা হচ্ছে এমনই।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা আট প্রার্থীর অন্তত ছয়জনেরই এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— জাতীয় পার্টির এমএ ছালাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নূরুল আক্তার, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ উল্যাহ খাঁন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মুহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, ন্যাশনাল পিপসল পার্টির মোহাম্মদ মোকতাদের আজাদ খান ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আব্দুর রহীম।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা। তার সামনে কেবল স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন— এমন আভাস মিলছে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)

চট্টগ্রাম-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা সাত প্রার্থীর পাঁচজনকেই খুব একটা চিনেন না এ আসনের ভোটাররা। এখানে প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন— জাতীয় পার্টির মো. দিদারুল কবির চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির খোকন চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মোহাম্মদ আকতার হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সদ্য পদত্যাগী এসএম আল মামুন। শেষ মুহূর্তে আদালতের নির্দেশে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইমরান। বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা ইমরানের দিকে ঝুঁকতে পারেন— এমন ধারণা দিচ্ছেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)

চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থীতালিকায় থাকা সাত প্রার্থীর চারজনই এলাকায় অনেকটা অচেনা। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— সুপ্রিম পার্টির কাজী মহসীন চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মুক্তার আহমেদ, বিএনএফের আবু মোহাম্মদ সামশুদ্দিন ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ছৈয়দ হাফেজ আহমদ।

এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের প্রার্থী এম এ সালামের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে সেখানে সমর্থন দেওয়া হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ তৃণমূলের সমর্থন পেলে এই আসনে এখন ব্যারিস্টার আনিসের সামনে তুলনামূলক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াতে পারেন ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন। একই সুযোগ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর সামনেও।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)

এই আসনে প্রার্থীতালিকায় থাকা পাঁচ প্রার্থীর চারজনই এলাকায় অনেকটা অচেনা। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সফিক-উল আলম চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স. ম. জাফর উল্লাহ।

এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন— এটা নিশ্চিত বলা চলে।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও আংশিক বোয়ালখালী)

এই আসনে মোট প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। এদের মধ্যে পাঁচজনই এলাকায় প্রায় অচেনা। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ রানা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আহমদ রেজা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ ইকবাল হাছান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. মোরশেদ আলম ও তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার সামনে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতোও কোনো প্রার্থী এবারের ভোটে নেই।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা ১০ প্রার্থীর অন্তত সাতজনেরই এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত বিএনএফের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল, তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা, কল্যাণ পার্টির মো. ইলিয়াছ, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. কামাল পাশা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল নবী। এখানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরী প্রচারণায় সক্রিয় থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবেন কিনা— তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে সেখানে সমর্থন দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠকে। ফলে শেঠের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী)

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ ওয়ার্ড মিলিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসন। এখানে মোট প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ছয়জনেরই এলাকায় খুব একটা পরিচিতি নেই। ফলে এই আসনে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এখানে আরও যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা হলেন— জাতীয় পার্টির সানজীদ রশীদ চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট আওয়ামী পার্টির মিটল দাশগুপ্ত, তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ নূরুল হুসাইন ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর)

চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থীতালিকায় থাকা ৯ প্রার্থীর ছয়জনই এলাকায় অনেকটা অচেনা। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— তৃণমূল বিএনপির মো. ফেরদাউস বশির, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আলমগীর হোসেন বঈদী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মিজানুর রহমান, জাতীয় পার্টির জহুরুল ইসলাম এবং জাসদের মো. আনিসুর রহমান।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলমের। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদও। নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি রয়েছে আগে থেকে।

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা সাত প্রার্থীর অন্তত পাঁচজনেরই এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— ইসলামিক ফ্রন্টের আবুল বাসার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম পার্টির মো. মহিউদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত, এনপিপির নারায়ণ রক্ষিত ও গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক।

এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের সঙ্গে।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া)

চট্টগ্রাম-১২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা আট প্রার্থীর ছয়জনই এলাকায় অনেকটা অপরিচিত। এখানে প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন— জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী এম এয়াকুব আলী, জাতীয় পার্টির মো. নুরুচ্ছফা সরকার, ইসলামিক ফ্রন্টের কাজী মো. জসিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির রাজীব চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সৈয়দ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জিহাদী এবং ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তার সঙ্গে ভোটের লড়াই সীমিত থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)

এই আসনেও প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। কারণ তার সঙ্গে প্রার্থী হওয়া বাকি ছয়জনই এলাকায় অপরিচিত। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— জাতীয় পার্টির আবদুর রব চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোছাইন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ মঈন উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক ও তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহমদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা আট প্রার্থীর অন্তত ছয়জনেরই এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, বিএনএফের মো. গোলাম ইসহাক খান, বিএসপির মো. আইয়ুব, জাতীয় পার্টির আবু জাফর মো. ওয়ালিউল্লাহ, তরীকত ফেডারেশনের মো. আলী ফারুকী এবং ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আবুল হোসাইন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীর।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা সাত প্রার্থীর পাঁচজনই এলাকায় অনেকটা অপরিচিত। এখানে প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন— জাতীয় পার্টির মো. ছালেম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. আলী হোসাইন, কল্যাণ পার্টির সোলায়মান কাশেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. হারুণ ও মুক্তিজোটের মো. জসিম উদ্দিন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। তার বিপরীতে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব। ভোটযুদ্ধও এই দুজনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে প্রার্থীতালিকায় থাকা ১০ প্রার্থীর মধ্যে সাতজনেরই এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই। এখানে প্রার্থী হয়েছেন— ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আব্দুল মালেক, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির আশীষ কুমার শীল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এম জিল্লুর করিম শরীফি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মুহাম্মদ আবছার চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ মহিউল আলম চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান ও ইসলামী ঐক্যজোটের মো. শফকত হোসাইন চাটগামী।

এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগেরই নেতা মুজিবুর রহমানের। এছাড়া এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!