চট্টগ্রামের জিম্মি জাহাজে জলদস্যু ডেরায় সেনা অভিযান যে কোনো মুহূর্তে

নৌ-সেনাদের সঙ্গে হাত মেলাবে সোমালিয়ার পুলিশও

সোমালিয়ার পুলিশ ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা একযোগে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোনো সময় এই অভিযান শুরু হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে ‘এমভি আবদুল্লাহ’কে জিম্মি করা জলদস্যুদের জন্য মাদকদ্রব্য নেওয়ার সময় একটি গাড়ি জব্দ করেছে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড প্রদেশের পুলিশ।

চট্টগ্রামের জিম্মি জাহাজে জলদস্যু ডেরায় সেনা অভিযান যে কোনো মুহূর্তে 1

সোমবার (১৮ মার্চ) পুন্টল্যান্ড প্রদেশের পুলিশবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

পুন্টল্যান্ডের পুলিশবাহিনী জানিয়েছে, তারা সতর্ক অবস্থায় আছে। আন্তর্জাতিক নৌ সেনারা জলদস্যুদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করছেন— এমন খবর পাওয়ার পর ওই অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুত রয়েছে তারা। ইতিমধ্যে তারা জলদস্যুদের সরবরাহ করার জন্য নেওয়া মাদকবাহী একটি গাড়ি জব্দ করেছে।

অবস্থান বদল বারবার

গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে দিয়ে দুবাইয়ের দিকে যাওয়া কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। এতে রয়েছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থানরত জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে জলদস্যুদের। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বন্দরে যাচ্ছিল জাহাজটি। ১৪ মার্চ দুপুরে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের হোবিও বন্দরে যাওয়ার পর জলদস্যুদের নতুন একটি দল ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর পর থেকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটির অবস্থান বারবার বদল করছে জলদস্যুরা। ১৪ মার্চ থেকে অন্তত তিনবার স্থান বদল করেছে এমভি আব্দুল্লাহ। সর্বশেষ জাহাজটি সরিয়ে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলে নোঙর করা হয়েছে। বর্তমানে জাহাজটির অবস্থান সোমালিয়ার গদবজিরান শহর থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে।

শনিবারের অভিযানে বড় সাফল্য

এর আগে শনিবার (১৭ মার্চ) বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাই করা মাল্টার একটি মালবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ভারতীয় নৌ বাহিনী। এ সময় ১৭ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। মাল্টার পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ ‘রুয়েন’ নিয়ে জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করে। ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানান, গত তিন মাস ধরে ছিনতাই করা এই জাহাজটি নিয়ে ভারত মহাসাগরে ঘুরে বেড়াতো সোমালিয়ার জলদস্যুরা। রুয়েন নামের এই জাহাজটি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ছিনতাই করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের পর এটিই প্রথম কোনো জাহাজ, যা সোমালিয়ার জলদস্যুরা সফলভাবে ছিনতাই করতে পেরেছিল।

ভারতের নৌ বাহিনী জানায়, রুয়েন জাহাজটিতে অভিযান চালানোর সময় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা লক্ষ্য করে গুলি করে জলদস্যুরা। তবে অভিযান শেষে জাহাজে থাকা সব নাবিককে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে। জাহাজটিতে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক আছে কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী ধারণা করছে, রুয়েন থেকেই বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ আব্দুল্লাহতে হামলা চালিয়েছিল জলদস্যুরা। মহাসাগরে এই জাহাজটিকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে জলদস্যুরা অন্যান্য জাহাজে হামলা চালাতো।

নজর রেখে যাচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনী

সোমালিয়ার জলদস্যুরা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে— এমন খবর পাওয়ার পরপরই খবর পেয়ে একটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার টহল জাহাজ মোতায়েন করে ভারতীয় নৌবাহিনী। বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নেওয়া পর্যন্ত কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নিয়ে জাহাজটিকে অনুসরণ করছিল ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ। ওই জাহাজটি ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় কাজ করছে।

গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের ‘এক্স’ একাউন্টে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে অবস্থান নেওয়া চারজন সশস্ত্র জলদস্যুর ছবি প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ওই জলদস্যুরা ‘এমভি আবদুল্লাহ’ থেকে মাস্টার কেবিনের ছাদে অস্ত্রসহ টহল দিচ্ছে। লং রেঞ্জ সার্ভিলেন্সের জন্য হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছবিগুলো নেওয়া হয়।

‘এক্স’র ওই পোস্টে ভারতীয় নৌবাহিনী জানায়, গত ১২ মার্চ এমভি আব্দুল্লাহ থেকে সাহায্যের সিগন্যাল পেয়ে তারা একটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট-এলআরএমপি পাঠিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিমানটি এমভি আব্দুল্লাহর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করতে পারেনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!