করোনার কালে বাংলাবাজার ঘাট নিয়ে খেলছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

মরণঘাতী করোনা ভয়াবহতার মধ্যে সাম্পান মাঝিদের ঘাট থেকে বিতাড়িত করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতিকে ঐতিহ্যবাহী বাংলাবাজার ঘাট হস্তান্তর করা হয়েছে।

করোনার কারণে লকডাউনে গত ১৬ দিন ধরে ঘাটে সাম্পান রেখে বেকার দিন কাটাচ্ছিল সাম্পান মাঝিরা। সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকালে লাইটার জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী সফির মালিকানাধীন বোট যাত্রী নিয়ে পারাপার করছে দেখে মাঝিরা হতভম্ব হয়ে যায়। যাত্রী নিয়ে বড় বোট ইছানগর ঘাটে গেলে সেটি আটক করে কর্ণফুলী থানায় অবহিত করে সাম্পান মাঝিরা। পরে মুচলেকা নিয়ে বোটটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাংলাবাজার ঘাটে বর্তমানে তিন শতাধিক সাম্পান মাঝি আছে। তারা পালা করে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। এখন ইজারাদার সাম্পানের পরিবর্তে দুটি বোট দিয়ে যাত্রী পারাপার করলে ঘাট থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে তিন শতাধিক সাম্পান। পেশা হারাবে মাঝিরা।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি আলীউর রহমান বলেন, ‘সাম্পান ও সাম্পানমাঝি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের প্রতীক। মাঝিদের পেশা টিকিয়ে আমরা ব্যর্থ হলে সাম্পান ও মাঝিরা চিরতরে হারিয়ে যাবে। আমরা কিছুতেই তা হতে দেবো না।’

২০০৩ সালের পাটনিজীবি আইনে উল্লেখ আছে, আগ্রহী জন্মগত পেশাদার পাটনীগণকে (সাম্পানমাঝি) ফেরীঘাট ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হইবে। পেশাদার পাটনীমাত্র একজন থাকিলে তাহার অনুকূলে সম্ভাব্য মূল্যে ফেরীঘাট ইজারা প্রদান করিতে হইবে।

ফেরীঘাট ইজারা (পাটনিজীবি) নীতিমালার ১(চ)৩ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘ফেরীঘাটের একটি পাড় ইউনিয়নের সীমার মধ্যে এবং অপর পাড়টি পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় অবস্থিত হইলে সেই ফেরীঘাট নিম্নবর্ণিত কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে সদস্য করে ঘাট ইজারা দিবেন।’

চট্টগ্রাম ইছানগর বাংলাবাজার ঘাটটি এক পাড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং অপর পাড়ে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। অথচ চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ঘাট ইজারা ঘোষণার আগে চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান ও কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী ভূমিকে ইজারা কমিটির সদস্য করা হয়নি।

এই ব্যাপারে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাবের আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কমিটি গঠন ছাড়াই ঘাট ইজারা দিয়েছে। যা অবৈধ।’

এই বিষয়ে রিটকারী এডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন। করোনার কারণে কোর্ট বন্ধ থাকার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তাকে আমি লিখিতভাবে অবহিত করেছি।’

এই বিষয়ে ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান বলেন, ‘আমরা সাম্পান মাঝি। সাম্পান চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা ছাড়া অন্য কাজ জানা নাই। সিটি কর্পোরেশনের এই অনৈতিক কাজে এখন আমরা দিশেহারা। আমাদের পেশা রক্ষায় আমরা প্রয়োজনে আমরন অনশন করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!