চট্টগ্রামে এক রোগী থেকে যেভাবে করোনা ছড়াল ৫ পরিবারে

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৫ জনই পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগরের বাসিন্দা। তবে তাদের প্রত্যেকের বাড়ি আলাদা, পাশাপাশিও নয়। একজনের ঘর থেকে অন্যজনের ঘরের দূরত্ব ১০০ থেকে ২০০ ফুট দূরত্বে। এদের সবাই সাতকানিয়ার প্রথম করোনা রোগী সিরাজুল ইসলামের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।

সাতকানিয়ায় আক্রান্ত এই ৫ জন আলাদা আলাদা পরিবারে এবং আলাদা বাড়ির। তবে তারা সবাই এক ব্যক্তি থেকে সংক্রামিত হয়েছেন। এদিকে ওই একই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। আবার এই ৫ জনের একজন পেশায় সিএনজিচালক, একজন গ্রাম পুলিশ, একজন ঠিকাদার ও বাকি দুজন মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশের দোকানদার। যাদের প্রত্যেকেই প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষের সংস্পর্শে আসেন। একজন থেকে ৫ পরিবারের ৫ জন আক্রান্ত হওয়ার এই চিত্রই বলে দিচ্ছে সেখানে সামাজিক সংক্রমণের চিত্রটা ঠিক কোন্ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি পেশাগত কারণে এই ৫ জনের মাধ্যমে আরও কতজনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে সেটা খুঁজে বের করাই হবে এখন সাতকানিয়ার প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

নতুন আক্রান্ত এই ৫ জনের একজন সিরাজুল ইসলামের ছেলে— তার বয়স ২৭। অপর ২ জন সিরাজুল ইসলামের ছেলের বন্ধু। এদের একজনের বয়স ২৫ বছর ও আরেকজনের ২৭। সিরাজুল ইসলাম অসুস্থ হওয়ার পর গাড়িতে তুলে দেওয়ার সময় তারা দুজনই পাশে ছিলেন। এদের একজন ঠিকাদার এবং অন্যজন মোবাইল ও বিকাশের দোকান করেন।

চতুর্থজন একজন সিএনজি চালক। তার বয়স ৩০ বছর। তার সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে করে বাড়ি থেকে হাসপাতাল যান সিরাজুল ইসলাম। করোনা পজিটিভ হওয়া পঞ্চম ব্যক্তি হলেন একজন গ্রাম পুলিশ। যিনি কোলে করে অসুস্থ সিরাজুলকে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে তুলে দিয়েছিলেন। তার বয়স ৩১ বছর।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহ। আলী নগরের ওই এলাকা থেকে মোট ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। বাকি ১১ জনের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।

এদিকে মঙ্গলবার বেশ কিছু পত্রিকায় স্থানীয় প্রতিনিধিদের করা রিপোর্টে ১৬ জনের সবাই নেগেটিভ— এমন সংবাদে নিজের বিরক্তির কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে আবু তাহের জিন্নাহ বলেন, ‘হুট করে কিছু পত্রিকা নিউজ করলো ১৬ জনের সবাই নেগেটিভ। এটা একটা বড় ক্ষতি করেছে আমাদের। ৪০০ পরিবার লকডাউন করার পর এখানে সবাই খুব ভয়ে ছিল। কিন্তু এসব বানোয়াট সংবাদের পর খানিকটা বদলে যায় পরিস্থিতি। এটা কোনভাবেই ঠিক হয়নি।’

এদিকে সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশার আলীনগরে এই এলাকার ৪০০ পরিবারকে আগেই লকডাউন করেছে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিউল কবির বলেন, ‘আগে থেকেই এখানে ৪০০ পরিবার লকডাউন। পুরো ৩ নম্বর ওয়ার্ডটাই লকডাউন। সেখানে লকডাউন জোরদার করা হবে আরও।’

প্রসঙ্গত সাতকানিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ৬৯ বছর বয়স্ক বাসিন্দা বৃহস্পতিবারই (৯ এপ্রিল) মারা গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পথে। তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ থাকায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠালে শনিবার (১১ এপ্রিল) জানা যায় তিনি করোনাভাইরাস নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। পরে তার সংস্পর্শে আসায় এবং পরবর্তীতে জানাজায় অংশ নেওয়ায় ৪০০ পরিবারের প্রায় ৪ হাজার মানুষকে লকডাউন করে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!