সন্ধ্যা ৬ থেকে সাতকানিয়া লকডাউন, আগের রাতে নদভী ছড়ালেন বিভ্রান্তি

করোনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা লকডাউন করা হচ্ছে। উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক এই নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় না করে স্থানীয় সাংসদ ড. আবু রেজা নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী আগের রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে আগবাড়িয়ে সাতকানিয়ায় লকডাউন ঘোষণা করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।

লকডাউনের ঘোষণা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিষয়, এটি জনপ্রতিনিধি বা সাংসদরা করতে পারেন না। নিয়ম হলো উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে। জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিলে উপজেলা প্রশাসন তা ঘোষণা দিয়ে বাস্তবায়ন করবে। করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ওই কমিটিতে উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসারসহ আরও সদস্য রয়েছেন। এক্ষেত্রে কমিটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করেন।

লকডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যুবরণ করেন সাতকানিয়ার সিরাজুল ইসলাম। তার পরে শনাক্ত হয় তার ছেলেসহ আরো ৫ জন। সিরাজুল ইসলামের জানাযায় অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তারা আক্রান্ত আবার নতুন আক্রান্তদের সংস্পর্শেও অনেকেই এসেছেন। এর আগে চৌধুরী পাড়া ও পৌরসভায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আমরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনকে সবাই আশা করি সহযোগিতা করবেন।’

প্রশাসনের কেউ সাংসদ নদভীর আগবাড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সাংসদ নদভী মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) গভীর রাতে তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘সাতকানিয়াকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা- করোনা পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান হারে ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাতকানিয়া উপজেলা ‘লকডাউন’ থাকবে। মাননীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্যকর কমপ্লেক্স ও থানা প্রশাসনের সাথে পরামর্শক্রমে এই নির্দেশনা দেন। লকডাউন চলাকালীন স্ব-স্ব এলাকায় করোনা মহামারির বিস্তার রোধ ও প্রাদুর্ভাব থেকে জনগণকে মুক্ত রাখতে স্থানীয় সকল জনপ্রতিনিধিদের এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন মাননীয় সাংসদ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সর্বসাধারণকে লকডাউনের নীতিমালা পুরোপুরি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, ‘তার এই ঘোষণা যেমন ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার তেমনি ছিল অনধিকার চর্চাও। এই ঘোষণায় এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে সমালোচনা মুখর হয়েছে। ’

প্রসঙ্গত, এই সাংসদ নিয়মিত কিছু একটা বলে বা করে আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন বলে অনেকের ধারণা। নিকট অতীতে তিনি ভোট ডাকাতির কথা স্বীকার করে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাদেরও অবাক করে দেন। প্রতিপক্ষকে একটা একটা করে সাইজ করার হুমকি দিয়ে নিন্দার মুখে পড়েন তিনি।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!