একদিনেই ৬৬২ করোনারোগী আগে দেখেনি চট্টগ্রাম, ৯ মৃত্যুর ৭ জনই উপজেলার

৩ দিনে মিলল ১৭৭৩ জন

করোনা ভাইরাসের থাবায় চট্টগ্রামের অবস্থা ক্রমশ ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম হয়ে উঠছে। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনিই নতুন ‘রেকর্ড’ গড়ছে। একই সাথে শনাক্তের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে করোনা কেড়ে নিচ্ছে নিত্যনতুন করোনারোগীর প্রাণ। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনার জীবাণু পাওয়া যায় আরও ৬৬২ জনের দেহে। যা চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের পর থেকে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম ৬ দিনেই করোনা রোগীর দেখা মিলল ২ হাজার ৮২৫ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৭৭৩ জন শেষ ৩ দিনে। একই সময়ে করোনায় মারা গেছেন ৯ জন। যাদের ৭ জনই বিভিন্ন উপজেলার।

এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগী গিয়ে দাঁড়াল ৬১ হাজার ৫৮৯ জন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৭ হাজার ৮৩০ জন। আর বিভিন্ন উপজেলার ১৩ হাজার ৭৫৯ জন। এদের মধ্যে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ৭৩১ জন। এদের মধ্যে ৪৮৪ জন চট্টগ্রাম নগরের। আর বিভিন্ন উপজেলায় মারা গেছেন ২৪৭ জন।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি ১০টি ও কক্সবাজারের ১টি ল্যাবে ১ হাজার ৮৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৬৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৪১৯ জন এবং উপজেলার অধিবাসী ২১৩ জন।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে করোনা পজিটিভ আসে ৪১ জনের শরীরে। এদের মধ্যে ২৩ জন নগরের এবং ১৮ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৫২১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনার উপস্থিতি মিলে দিনের সর্বোচ্চ ২১৬ জনের দেহে। এদের মধ্যে নগরের ১৪৫ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৭১ জন।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৯ জনকে করোনার জীবাণু বাহক হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে নগরের ৪১ জন। বাকি ৮ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৫২ জনের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ২৯ জন নগরের অধিবাসী, বাকি ২৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে ২৮ জনের করোনা পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে ২৩ জনই নগরের, ৫ জন উপজেলার।

এছাড়া, নগরীর বিভিন্ন ল্যাবে এন্টিজেন টেস্ট করানো হয় ৪২১টি নমুনা। তাতে করোনা পজিটিভ আসে ১২৫ জনের। এর মধ্যে ৫৬ জন নগরের এবং ৬৯ জন বিভিন্ন উপজেলার।

নগরীর বেসরকারি করোনা পরীক্ষাগারের মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। তাতে ৪৬ জনের দেহে ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ৪২ জনই নগরের, ৪ জন উপজেলার। শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ২৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জন করোনা পজিটিভ রোগীর খোঁজ মিলে। যাদের ৩৫ জন নগরের এবং ১২ জন বিভিন্ন উপজেলার। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯ জন করোনা রোগীর হদিস পাওয়া যায়। যাদের সবাই নগরের। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার ল্যাবে ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নগরের ৭ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়। ইপিক হেলথ কেয়ারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে ২৯ জনই নগরের, বাকি ১ জন উপজেলার।

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে উপজেলার ২ জনের নমুনায় করোনা পজিটিভি পাওয়া যায়।

উপজেলায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত রোগী পাওয়া যায় সীতাকুণ্ডে। সেখানে ৪১ জনের দেহে ভাইরাসটির জীবাণু পাওয়া যায়। এছাড়া মিরসরাইয়ে ৩৮ জন, ফটিকছড়িতে ৩২ জন, হাটহাজারীতে ২১ জন, রাউজানে ২০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৩ জন, লোহাগাড়া ও বোয়ালখালীতে ১০ জন করে, বাঁশখালীতে ৯ জন, পটিয়ায় ৮ জন, আনোয়ারায় ৬ জন, চন্দনাইশ ও সন্দ্বীপে ২ জন করে এবং সাতকানিয়ায় ১ ​করোনা পজিটিভ রোগীর হদিস মিলে।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!