আবিদ হত্যার ন্যায়বিচারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় পরিবার

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলেন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রদলকর্মী আবিদুর রহমানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার। সোমবার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবিদের ভাই জিল্লুর রহমান।

জিল্লুর রহমান বলেন, আবিদকে তারই সহপাঠী ও বড়ভাই ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে হকিস্টিক, লাঠি, স্ট্যাম্প ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ‘ছাত্র সংসদ নামের টর্চার সেলে আবিদের ওপর সন্ত্রাসীরা তিন-চার ঘণ্টা নির্যাতন চালাচ্ছিল’ এমন খবর পেয়েও কলেজ প্রশাসন আবিদকে বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। চমেক শিক্ষার্থী হয়েও চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়াটা দুঃখজনক। সেদিন যদি আবিদ চিকিৎসার সুযোগ পেত, হয়তো আমার মায়ের বুক খালি হতো না।

নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর আবিদ তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হলে তাকে ধরে ছাত্র সংসদের অফিসকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম দফা নির্যাতন শেষে আবিদ ছাত্রাবাসে চলে আসে। ছাত্রাবাসে আরো দুই দফা নির্যাতনের পর রাতে এক সহপাঠীকে দিয়ে আবিদকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরদিন উত্তাল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আবিদকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হলেও, সেখানে তার চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়। পরদিন ২১ অক্টোবর রাতে আবিদ মারা যায়।

জিল্লুর রহমান দাবি করেন, ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা করতে এবং আন্দোলন থামাতে তৎকালীন চমেক প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। পাশাপাশি ছাত্রাবাসগুলো খালি করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ সম্প্রতি বুয়েটছাত্র আবরার হত্যার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ ও বুয়েট প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আবিদ হত্যার পর চমেক প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

পরের বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে পাঁচলাইশ থানা ১২ জনের নামে যে প্রতিবেদন জমা দেয়, আমরা মনে করি সেই প্রতিবেদন খুনিদের প্ররোচনায় এবং কলেজ প্রশাসনের ইন্ধনে তৈরি হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ওই চার্জশিট দেয়ার কোনো খবর মামলার বাদিকে দেওয়া হয়নি। বাদি খবর না পাওয়ায় এবং নারাজি না দেয়ায় ১২ জনকে আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়। আদালত ওই ১২ জনের বিচারকাজ শুরু করে। বাদিপক্ষের অনুপস্থিতে চলতি বছরের ১৭ জুলাই ওই মামলার রায় দেওয়া হয়। রায়ে আদালত সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানান জিল্লুর রহমান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত পাড়া থেকে এই মামলার বাদি আমার মামাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল আসামিদের লোকজন। উনার মুঠোফোনে অনবরত খুনিরা হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এরপর থেকে উনি আর আদালতে যাননি।

আবিদ হত্যার ন্যায়বিচারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় পরিবার 1
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন আবিদের ভাই জিল্লুর রহমান

সংবাদ সম্মেলনে আবিদের বড় বোন মোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বুয়েটে আবরারকে যেভাবে হত্যা করা হয়, সেভাবে আবিদকেও হত্যা করা হয়েছিল। যদি আবিদ হত্যার বিচার হতো তাহলে আবরার হত্যা হতো না। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খুনি তো খুনিই, সব খুনির বিচার হবে। উনি যেমন শেখ রাসেলকে ভুলতে পারেননি, আমরাও আমাদের ভাইকে ভুলতে পারব না। আমরা ভাইয়ের খুনের বিচার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে সন্তান হত্যার বিচায় চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবিদের মা সৈয়দুন্নেসা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

সংবাদ সম্মেলনে আবিদের বড় ভাই লুৎফুর রহমান, বোন সাজেদা ইয়াসমিন, শাহেদা ইয়াসমিন, মুরশেদা ইয়াসমিন, রায়হান জান্নাত, ভগ্নিপতি সোহেলসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে তিন দফা নির্যাতন শেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ অক্টোবর রাতে মারা যান চমেক ছাত্রদলকর্মী আবিদ। ওই ঘটনায় তার মামা নেয়ামত উল্লাহ চৌধুরী বাদি হয়ে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ১২ জনের নামে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। ১৭ জুলাই ২০১৯ ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে অভিযুক্ত সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।

এফএম/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!