অ্যাপোলোর নাম সরাতে সময় চাইলো ইম্পেরিয়াল, সিদ্ধান্তহীনতায় সিভিল সার্জন

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দু’বার চিঠি দেওয়ার পরও ‘অ্যাপোলো’ নামটি সরায়নি চট্টগ্রাম নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। নাম সরাতে সময় চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কতদিন সময় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি সিভিল সার্জন।

গত ৩ ডিসেম্বর হাসপাতালটির বিরুদ্ধে লাইসেন্সের শর্তভঙ্গের অভিযোগ এনে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নামযুক্ত সমস্ত সাইনবোর্ড, প্রচারপত্র ও অফিসিয়াল দস্তাবেজ অপসারণ করার জন্য সময় দেওয়া হয়। অন্যথায় বিধিমতো ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয় চিঠিতে।

কিন্তু ১০ দিন পার হওয়ার পরেও অ্যাপোলো নামটি সরায়নি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে এচিত্র।

এছাড়া হাসপাতালটিতে সাইনবোর্ড, প্রচার-প্রচারণায় এবং ওয়েবসাইটেও অ্যাপোলো নামটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের নাম ‘অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল’ রাখা হয়।

তবে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, অ্যাপোলোর নামটি লাইসেন্সে নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা এক নথিতেও মিলেছে লাইসেন্স অনিয়মের তথ্য৷ নথিপত্রে দেখা গেছে, ‘ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড’ নামে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর লাইসেন্স নবায়ন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু হাসপাতালটি এখনও চলছে ‘অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল’র নামে।

আরও জানা গেছে, ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সঙ্গে ব্র্যান্ড লাইসেন্স ও অপারেশন ম্যানেজমেন্টের চুক্তি করে এবং শুধুমাত্র ‘অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল’র একটি লোগোর অনুমোদন নেওয়া হয়। কিন্তু সব ধরনের লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন না করে ‘অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল’ নামে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত করছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে সাতদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। তখনও নাম পরিবর্তন করেনি হাসপাতালটি। এদিকে দ্বিতীয়বার গত ৩ ডিসেম্বর ফের ১০ দিনের মধ্যে অ্যাপোলো নাম সরিয়ে ফেলার চিঠি পেলেও এখনও নাম পরিবর্তন করেনি হাসপাতালটি।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর দেওয়া সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের কার্যক্রম আপতত বন্ধ থাকবে। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর লাইসেন্স নবায়ন করে হাসপাতালটি।

দ্বিতীয় দফায় দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডের কার্যক্রম অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল নামে পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমত ভিন্ন নামে কার্যক্রম পরিচালনা বিধি পরিপন্থি এবং বিভ্রান্তিকর। দ্বিতীয়ত যেহেতু চিকিৎসাসেবা স্পর্শকাতর বিষয়। বিধিমতে নাম পরিবর্তন ব্যতিরেকে সকল বিলবোর্ড, বিজ্ঞাপন, অফিসিয়াল প্যাড, পত্র যোগাযোগ, সর্বক্ষেত্রে লাইসেন্স অনুযায়ী ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নামে পরিচালনা একান্ত অপরিহার্য ও বিধিসম্মত।

চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ইস্যুকৃত ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড ব্যতীত অন্য কোনো নাম সংযোজন-বিয়োজন করে স্থাপিত বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপন, অফিসিয়াল প্যাড, পত্র যোগাযোগ ইত্যাদি অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড আগামী ১০ দিনের মধ্যে অপসারণ ও লাইসেন্সের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। সেবা গ্রহীতাগণ প্রতারণা ও বিভ্রান্তির সম্মুখীন না হওয়া এবং জনস্বার্থে উপরোক্ত নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। অন্যথায় বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হ্যাঁ, আমাদের অ্যাপোলো নামটি সরানো হয়নি। সিভিল সার্জন থেকে আমরা একটা চিঠি পেয়েছি, আমরা সেই চিঠির জবাব দিয়েছি। কি জবাব দিয়েছি, সেটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোঁজ নেন, পাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেডকে চিঠি দিয়েছিলাম। কারণ তাদের হাসপাতালটি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নামে লাইসেন্স করা আছে। কিন্তু তারা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সঙ্গে অ্যাপোলো নাম যুক্ত করে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নামে চালিয়ে আসছে। যেটি অবৈধ এবং অঅনুমোদিত। আমরা ১০ দিন সময় দিয়েছিলাম নামটি সরিয়ে ফেলতে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় চেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এটি মৌখিকভাবে আমি জানিয়েছি।

তারা কতদিন সময় চেয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কতদিন সময় দেবো সেটির ওপর নির্ভর করছে। তাদের যদি অ্যাপোলো নামটি রাখতে হয়, তাহলে নতুন করে অ্যাপোলো নামের লাইসেন্স প্রয়োজন হবে, সেজন্য সময় চেয়েছে। আমরা এখনও সময় নির্ধারণ করে দিইনি।

এআইটি/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!