ঘুমে বন কর্তারা, দিনদুপুরে গাছ কেটে ইটভাটায় দিচ্ছে সক্রিয় সিন্ডিকেট

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনভূমি ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। সংরক্ষিত বন ও বনভূমি দেখভাল এবং রক্ষায় বন বিভাগ থাকলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়ার বনাঞ্চল দিন দিন বৃক্ষশূন্য হওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতি।

চলতি শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়ে শুরু হয়েছে বনাঞ্চলের চারা গাছ নিধনের মহোৎসব। ড্রাম্পার জিপ ও ট্রাকে করে এসব চারা গাছ কেটে লকড়ি হিসেবে পাচার করছে একটি সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনদুপুরে এসব বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারণে বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে। ফলে দিনের পর দিন ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও বনদস্যু ও ভূমিদস্যুদের থাবায় ন্যাড়া পাহাড়ও রক্ষা পাচ্ছে না। সেখানে অবৈধ বসতি স্থাপনের পাশাপাশি পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে মাটি।

জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দিনে রাতে প্রতিদিন বনের গাছ কেটে শতাধিক টন কাঠ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে। সস্তায় কাঠ পাওয়া যাওয়ার কারণে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে গাছ পোড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এক শ্রেণীর বন কর্মকর্তার যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়া বিভিন্ন সড়ক ও নদীপথে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চলের গাছ ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। প্রতি চাঁদের গাড়ি বা ট্রাকের চাঁদার টোকেন বন কর্তাদের কাছে জমা হওয়ার পর গাড়িগুলো ফ্রি চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায়। রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ, ইছামতী রেঞ্জ, ইসলামপুর, বগাবিলী, কোদলা, খুরুশিয়া, চিরিঙ্গা, পোমরা বনবিট ও কর্ণফুলী নদীর পাশে বনজ শুল্ক ফাঁড়ি থাকলেও টোকেন দেখানোর পর ওরা নীরব দর্শক হয়ে যায়। ফলে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়গুলো দিনে দিনে ন্যাড়া পাহাড়ে রূপ পাচ্ছে। শুধু পাহাড়ের কাঠ পোড়ানের সুবিধার জন্য রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ও সংরক্ষিত বনের পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা। আবার এসব উপজেলার ইটভাটায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানও চালানো হলেও কোন ধরনের প্রভাব নেই। ইটভাটাগুলো চলছে খেয়াল খুশিমত।

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুক করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি জরুরি কাজ থাকার কারণ দেখিয়ে এই ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, শীঘ্রই মধ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কোনও ভাটা পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনও ইটভাটায় বনের কাঠ, ফসলি জমির উর্বর মাটি ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করা হয় সে সব ইটভাটা বন্ধ করে মালিকদের বিরূদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!