নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে এমপি নদভী দুবাইতে, নৌকার বিরোধিতা শুরু থেকেই

রাত পোহালেই বহুল আলোচিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের শেষ সময়ে ভোটের জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে সাতকানিয়ায় এসবের মাঝেও ভোটের মাঠে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরকার দলীয় স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা নেজাম উদ্দিন নদভীর বিদেশ সফরে থাকা।

দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে না থেকে শুধু বিদেশ সফরেই ক্ষান্ত থাকেননি তিনি। নিজ অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মীদের নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছেন এমনও প্রচার আছে। যদিও তিনি নৌকার প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব আহমেদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নিজের নাখোশের কথা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বির্তকের জন্ম দিয়েছিলেন।

জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর মতামত না নেওয়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মনোনয়ন বোর্ডের প্রতি বেজায় নাখোশ ছিলেন। এ নিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে নিজের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যেই নৌকার প্রার্থী মোতালেব আহমেদের বিরোধীতায় নামেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি চট্টগ্রাম-১৫ ( সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে পরপর ২ বারের সংসদ সদস্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, উপজেলা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমার সাথে মতবিনিময় করার প্রয়োজনও মনে করেননি। তাদের আচার-আচরণে মনে হয়, আমি বিরোধীদলীয় এমপি…।’

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে, সোমবার (১৪ অক্টোবর) নির্বাচন হবে। সে কারণে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ১২ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর বাছাই ২২ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। তবে গত ৭ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান এমডি নদভী। সেখানে গিয়ে তিনি ১২ অক্টোবর আমিরাতের ‘শারজাহর মাম’ রেস্টুরেন্টে সাতকানিয়া প্রবাসী আওয়ামী পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংবর্ধনা গ্রহণ করেন। একইভাবে অন্য একটি আয়োজনে ভোটের দিন শারজাহর আল হুদায় বিয়া রেস্টুরেন্টেও একটি সংবর্ধনায় অংশ নিবেন। আগামী ১৬ অক্টোবর এমপি নদভীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

দুবাইয়ের সংবর্ধনায় সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী।
দুবাইয়ের সংবর্ধনায় সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী।

সাতকানিয়ার বাসিন্দা বেশ কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় আসার জন্য স্থানীয় এমপি নদভীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ২৫-৩০ জনের একদল প্রবাসীর টিম। তখন এমপি নদভী তাদের জানিয়েছেন, তিনি ৭ অক্টোবর আমিরাত সফরে যাবেন তাই তারা দেশে যেন না আসেন। এমপি যাবেন বলেই তখন আর দেশে আসার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন প্রবাসী আওয়ামী লীগের ওই টিম।

শুধু কি প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসতে না দিয়ে নিজে সেখানে গিয়ে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণায় পরোক্ষভাবে বাধা দিয়েছেন এমপি আবু রেজা নেজাম উদ্দিন নদভী? তিনি আরব আমিরাতে বসে নিজ অনুসারী নেতা-কর্মীদের নানা মাধ্যমে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করতে উৎসাহিত করছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে সাতকানিয়া উপজেলায় বিএনপি জামায়াতের নাশকতা ও খুনের একাধিক মামলার বেশ কয়েকজন আসামি এলাকায় আসেন। তখন স্থানীয় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নিলে তখন অদৃশ্য কারণে সেই প্রক্রিয়াও থেমে যায়। ফলে অবাধেই নাশকতার আসামিরা ধানের শীষের পক্ষে নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এজন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুষছেন নিজ দলীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা নেজাম উদ্দিন নদভীকে।

যদিও চট্টগ্রামের সিনিয়র এক নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন একজন সংসদ সদস্য নিজ নির্বাচনীয় এলাকায় নিয়ম মেনে প্রচারণায় অংশ নিতে কোনও আইনি বাধা নেই। সে কারণে এমপি নদভী আচরণ বিধি ভঙ্গের অজুহাতে এলাকা ত্যাগ করেছেন সেটিও বলার সুযোগ নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন,‘নিজের পছন্দের প্রার্থী দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় এমপি নদভী বেজায় নাখোশ ছিলেন। যার প্রতিফলন ঘটেছিল মনোনয়ন ঘোষণার পরই তার দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে। এরপর নিজে এমপি হয়েও নৌকার পক্ষে লোক দেখানো কয়েকদিন কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি বিদেশ চলে যান। এমনকি সেখানকার প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসতে চাইলে তাদেরও মানা করেন। নিজ অনুসারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৌকার বিরুদ্ধে বলছেন।’

জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সভাপতি জননেত্রীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে তার একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। নেতা-কর্মীরা তার জন্য রাত দিন প্রচারণা চালিয়েছেন। যদিও দলের এক শ্রেণির লোক নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কৌশলী আচরণ করেছেন। এরপরও মোতালেব ভাইয়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিজয় আমাদেরই হবে। আগামীকাল একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নেত্রীকে জয় উপহার দিত পারব ইনশাল্লাহ।

তবে দেশের বাইরে থাকায় এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. নেজাম উদ্দিন আবু রেজা নদভীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৪ অক্টোবর) সাতকানিয়া উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮০ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৬ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪ জন। ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট ১২৫টি কেন্দ্রে ৭০১টি বুথে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দ্বারা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফফার চৌধুরী (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরী (মোটরসাইকেল)। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন, তারান্নুম আয়েশা (প্রজাপতি) ও আঞ্জুমান আরা বেগম (কলসি)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী- মোহাম্মদ শাহজাহান (তালা), সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী (বই), মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (চশমা), বশির উদ্দিন আহমেদ (ধানের শীষ) আছিফুর রহমান সিকদার (মাইক) ও ওমর ফারুক লিটন (নলকূপ)।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ শেখ ফরিদ জানান, ইভিএম-এ ভোটগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শনিবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ‘মক’ ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি রয়েছে।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!