গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে নগরে ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ অভিযান

নগরের গণপরিবহনের অনিয়মে লাগাম টানতে মাঠে নেমেছে ট্রাফিক বিভাগ। সড়কের উপর দাঁড়িয়ে, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানমা,অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রুট পার্মিট অনুযায়ী চলাচল না করা, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করাসহ গণপরিবহণে নানান বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)প্রাথমিকভাবে নগরের ১৩ রুটের ১০ ও ৬ নম্বর রুটে অভিযান পরিচালিত হয়। এদিকে সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ধরনের অভিযানকে সমর্থন করছেন।
চট্টগ্রামে গণপরিবহনে চলাচলকারীরা জানান, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, রুট পার্মিট অনুযায়ী যাত্রী পরিবহণ না করে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, সড়কের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে দাড়িয়ে যাত্রী নেয়া,অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট।
এ বিষয়ে মো. জাহাঙ্গীর নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সন্ধ্যা হলে অনেক রুটে চালক-হেলপাররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এতে আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হই। অনেক সময় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের দেখা পাই না।’
কলেজ ছাত্রী আমরিন হক বলেন, ‘কম খরচে চলাচল করতে বাসে যাতায়াত করতে চাই। কিন্তু আমাদের নগরের কোন রুটেই বাস সহজে পাওয়া যায় না, পেলেও প্রচণ্ড ভীড়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাসে চড়তে হয়।তাও ভীষণ অনিয়মিত হওয়ার কারণে নির্ভর হওয়া যায় না।’
সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীরা জানিয়েছেন, ৩ নম্বর রোডের রুট পার্মিট নিউমার্কেট-ফতেয়াবাদ পর্যন্ত (১৪.৫ কিলোমিটার) নির্ধারিত ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ যানবাহন রুট পার্মিট অনুযায়ী ফতেয়াবাদ পর্যন্ত চলাচল করে না। সন্ধ্যা হলেই চালক হেলপার মিলে যাত্রীদের নিউমার্কেট থেকে বহন করে মুরাদপুর এনে নামিয়ে দেন। ভাড়া নেন ১০ টাকা। কিছু গাড়ি আছে যারা মুরাদপুর থেকে ফতেয়াবাদ ২০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী বহন করেন। ফলে বাধ্য হয়েই হাটহাজারী সার্ভিসে ৩০ টাকা ভাড়ায় যাতায়ত করতে হয়। টিকেট ব্যবস্থা না থাকায় হেলপারেরা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করেন। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে চালক হেলপারের সাথে প্রায় তর্ক ও মারামারির ঘটনা ঘটে। বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে গাড়ি আটক ও জরিমানার ফলে দুর্ভোগ কিছুটা কমে।
এদিকে, ১০ নম্বর রুটের গাড়ির গন্তব্য কাটগড় থেকে কালুরঘাট (২৫ কিলোমিটার দুরত্ব) হলেও সন্ধ্যার সময় যাত্রীদের আগ্রাবাদ নামিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কাটগড় থেকে আসা গাড়ি মুরাদুপর বহাদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথায় যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। ট্রাফিক পুলিশের নজরদারির অভাবে চালক হেলপারের ইচ্ছেমত গাড়ি চলাচল ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ব্যস্ত সড়ক ১০ ও ৬ নম্বর রুটে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযানে মাঠে নেমেছে ট্রাফিক বিভাগ। লাইসেন্স ও ফিটসেনবিহীন গাড়ির জরিমানা ও জব্দ, অভিযানে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ, চালকেদর ইউনিফর্ম পরা ও রুট পার্মিট অনুযায়ী গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে রুটের শুরু ও শেষ গন্তব্যে চালকদের গাড়ির কাগজপত্র দেখিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ করে টিকেট তদারকি করছে। তবে অভিযানের খবর পেয়ে হঠাৎ কিছু গণপরিবহন সড়ক থেকে উধাও হয়ে গেছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) অভিযানে ২৭ যানবাহনকে জরিমানা ও ৩ যানবাহন জব্দ করা হয়েছে।
টিআই প্রশাসন (ট্রাফিক উত্তর) মোহাম্মদ মুহিউদ্দিন খান বলেন, ‘যানবাহনগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও রুট পার্মিট অনুযায়ী চলাচল না করাসহ বিভিন্নভাবে ট্রাফিক আইনকে ভঙ্গ করে। আমরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য প্রাথমিকভাবে দুই রুটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। পর্যায়ক্রমে সব রুটে অভিযান চালাবো।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিচাস) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসার আশা করলেও বাস্তবে তা হয়নি। যাত্রীরা গাড়ি থামার জন্য যেখানে সেখানে হাত উচিয়ে রাখেন। চালকেরাও হয়ে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করেন। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিচাস) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজিদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে পরিচালিত এ অভিযানকে স্বাগত জানাই। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং পর্যায়ক্রমে সব রুটে অভিযান জরুরি।মূলত বিষয়টিকে নিয়মিত তত্ত্বাবধান করতে হবে।’

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!