পুরাতন নোংরা মশলা ও রান্নার উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় Handi মুখরোচক খাবার! ‘হাইওয়ে সুইটস’ মিষ্টি তৈরির চিনির সিরায় মশা মাছি ও নোংরা
রাজীব সেন প্রিন্স :
চট্টগ্রামের ভোজন রসিক মানুষের অন্যতম প্রিয় এবং পছন্দের একটা খাবারের জায়গা Handi রেস্টুরেন্ট। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও ভোজন পিপাসুরা এখানে ছুটে আসে নানান রকম দেশি ও ইন্ডিয়ান খাবার খেতে। দেশে অবস্থানরত বিদেশী পর্যটকরাও প্রতিদিন এ রেষ্টুরেন্টে ভিড় করে ইতালী ও চাইনিজ আইটেমের জন্য।
যাদের খাবারের এত নামের ছড়াছড়ি তাদের রান্নাঘরের অবস্থান ছিলো সকলের কাছে অজানা। গতকাল রবিবার সকলের চোখ খুলে দিলো র্যাবের উদ্দ্যেগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় র্যাবের সিনিয়র এএসপি মোঃ সোহেল মাহমুদ, র্যাব সদর দপ্তরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আনিসুর রহমান, বিএসটিআইয়ের মাঠকর্মকর্তা মোঃ জিশান আহমেদ তালকুদার স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হান্ডি রেষ্টুরেন্টে।
নগরীর খুলশী থানা দামপাড়া পুলিশ লাইন সংলগ্ন পুনাক ভবনে অবস্থিত হান্ডি রেষ্টুরেন্টে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
টিমটি সরেজমিনে গিয়ে Handi রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন, রান্না ঘরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। কিচেনের কর্মিরা কোন প্রকার হ্যান্ড গ্লোবস ছাড়াই খালি হাতে খাবার প্রস্তুত করছে। রান্নাঘরে থাকা কয়েকটি ফ্রিজে রাখা আছে বেশ পুরাতন নোংরা মশলা এবং অন্যান্য রান্নার উপকরণ।
এছাড়াও হান্ডি রেস্ট্রুরেন্ট এর একটি ক্যাশ ম্যামো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আধা লিটার ১টি মাম পানির বোতলের দাম (যার গায়ে খুচরা মূল্য লেখা ১৫ টাকা) রাখা হচ্ছে ২০ টাকা।
পরে নোংরা পরিবেশে খাবার প্র্রস্তুত, সংরক্ষণ এবং দ্রব্য মূল্যের দাম বেশী রাখার কারণে বিএসটিআই অধ্যাদেশ ১৯৮৫ (সংশোধনী ২০০৩) এর ২৪ ধারা এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক হান্ডি রেস্টুরেন্টের মালিক মোঃ মহিউদ্দিন আল-রিয়াজ (৪৩)কে ১ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ম্যানেজার জালাল উদ্দিন (৪৫)কে ১ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
একইদিন এ অভিযানের মাত্র দেড় ঘন্টা পরে র্যাবের এ টিমটি অবস্থান করেন নগরীর খুলশী থানা লালখান বাজার ‘হাইওয়ে সুইটস’ এ। তবে এখানে দীর্ঘ অভিযান শেষে কোন চা বিরতি বা মিষ্টি পান করতে যায়নি ভ্রাম্যমান আদালতের টিমটি। মিষ্টির দোকানের ভেতরের অবস্থান দেখে রীতিমতো বিস্মিত সবাই।
এতদিন কম বেশি সকলেরই জানা ছিলো চট্টগ্রামের অভিজাত মিষ্টি দোকানের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে ‘হাইওয়ে সুইটস’। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার অভিজাত মানুষের কাছে এ প্রতিষ্ঠানের মিষ্টি খুবই জনপ্রিয়। তবে খেতে অনেক সুস্বাধু হলেও মিষ্টি তৈরির উপকরণ কিংবা কারখানার পরিবেশ যে এতই খারাপ অবস্থা হবে তা কিন্তু কখনো কল্পনা করেনি কেউ। র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের চোখ এড়িয়ে যায়নি বিষয়টিও।
র্যাব জানায়, ‘হাইওয়ে সুইটস’ এর কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরী করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কোন রকমের ঢাকনা ছাড়াই মিষ্টিগুলো নোংরা ফ্লোরে পাত্রে রাখা হচ্ছে। মিষ্টি তৈরী করার চিনির সিরার ভিতর দেখা যায় মশা, মাছিসহ অন্যান্য ময়লা উপকরণ পড়ে আছে। এই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরী এবং সংরক্ষনের কারণেই জরিমানা গুনতে হয় স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিকে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টা অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের এসব ক্ষতিকর দিক খুঁজে পায় ভ্রাম্যমান আদালতের টিমটি।
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আনিসুর রহমান জানান, নগরীর লালখান বাজার, ‘হাইওয়ে সুইটস’ কে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরী এবং সংরক্ষনের অপরাধে জরিমানা করা হয়।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৫২ ধারা মোতাবেক ‘হাইওয়ে সুইটস’ এর ম্যানেজার কৃষ্ণদল মজুমদার (৬৩)কে ২ লক্ষ টাকা এবং হিসাব রক্ষক প্রদীপ কুমার বড়ুয়া (৬৫)কে ১ লক্ষ টাকাসহ সর্বমোট ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
পৃথক দুটি অভিযানে আদায়কৃত জরিমানার সর্বমোট ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এ ম্যাজিস্ট্রেট।
রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::