স্কুলছাত্র নিখোঁজ/ তাবলীগের টানেই কি নিরুদ্দেশ হল চট্টগ্রামের সাকিব?

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাকিব সাহাবের (১৫) নিখোঁজ রহস্যের উদঘাটন এখনো করতে পারেনি পুলিশ। তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে তার নিরুদ্দেশ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা গেছে। মূলত অপহরণ নয়, নিজ থেকেই তাবলীগ জামাতের প্রতি আকৃষ্টতা থেকেই এ নিরুদ্দেশ হতে পারে সে। দীর্ঘ সময় ধরে সৌদি আরবে বড় হওয়া সাকিব বাংলায় তেমন পারদর্শী না হলেও আরবি ও ইংরেজিতে পারদর্শী। নিয়মিত পড়তো নামাজও।

সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়ার কাছে স্কুল ছাত্র সাকিবের নিখোঁজ রহস্যের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি তেমন নেই। অগ্রগতি বলতে স্কুলের সামনের সড়কের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ আর বিশ্লেষণই। তদন্ত চলছে।’

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোববার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দুটি পাঞ্জাবি, বেল্টসহ একটি প্যান্ট, একটি সাবান, টুথপেস্ট, ব্রাশ ও কলম সঙ্গে নিয়ে গেছে সাকিব। তবে স্কুলের ব্যাগসহ বের হলেও স্কুলের পরিচয়পত্র ও বইপত্র সে বাসায় রেখে যায়।

এছাড়া নিয়মিত নামাজ পড়া এ স্কুল ছাত্র তাবলীগ জামাতের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। তাবলীগের বৈঠকেও অংশ নিতো নিয়মিত। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে তাবলীগের প্রশংসাও করতো সে। ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই সে স্কুলে যাওয়ার নাম করে তাবলীগে চলে গেছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রোববার দুপুর ২ টায় চট্টগ্রামের লাভলেইন তাবলীগ মসজিদে একটা ছেলেকে নিয়ে যান প্রবীণ এক ব্যক্তি। প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই ছেলের বয়স ১৪-১৫ বছর হবে এবং ছেলেটি ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থী। বিদেশ থেকে এসেছে ছয় মাস আগে। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনার সঙ্গে সাকিবের মিল পাওয়া যায় অনেকটাই। ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রোববার জামাতের এন্ট্রি না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার নতুন জামাত নেবে। তাই বৃহস্পতিবার ওই ‘মুরব্বী’সহ সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে সাকিবের মামা আতাউর রহমানও বলেছিলেন, ‘সাকিব গত ছয় মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছে। সে দেশে এসে জানুয়ারিতে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। তার স্বভাব অত্যন্ত ভালো ও নম্র। সে কারও সঙ্গে তেমন মেশার সুযোগও পায়নি। বাংলা ভাষায় কথা বলতে সে খুব বেশি স্বচ্ছন্দ নয়। সাধারণত ইংরেজি ও আরবি ভাষায় সে কথা বলতো। তবে নিয়মিত নামাজ কালাম পড়তো। তার সঙ্গে কারও শত্রুতা থাকার কথাও নয়। কিন্তু কেন সে নিখোঁজ হলো বিষয়টি আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।’

যেভাবে নিরুদ্দেশ হয় সাকিব
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাকিব, সুমাইয়া ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে প্রতিদিনের মত সকাল সাতটায় নগরীর মেহেদীবাগের বাসা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাসিরাবাদে যান তার মা। নাসিরাবাদের সাউথ পয়েন্ট স্কুলে সুমাইয়া দশম শ্রেণীতে আর সাকিব নবম শ্রেণীতে পড়ে। আর এই সড়কের প্রায় ১০০ হাতের মধ্যে একই স্কুলের প্রাইমারি শাখায় পড়ে তাদের ছোট ভাই।

প্রতিদিনের মত সাকিবদের মা সাউথপয়েন্ট স্কুলের সামনে সাকিব ও সুমাইয়াকে নামিয়ে দিয়ে অদূরেই অবস্থিত প্রাইমারি শাখায় ছোট ছেলেকে দিতে যান। এ সময় বড় বোন সুমাইয়া স্কুলে প্রবেশ করলেও সাকিব যে সিএনজি করে মেহেদীবাগ থেকে এসেছে সেই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চলে যায়। পরে স্কুল ছুটির পরও বোন ও মা সাকিবকে স্কুলে না পেয়ে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করা হয়। সব জায়গায় সাকিবের খোঁজ না পেয়ে রাতে তার মামা আতাউর রহমান পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন। এরপর পুলিশ এ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে স্কুল গেট ও আশপাশের সড়কের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে।

ফুটেজ সংগ্রহ ছাড়াও পুলিশ এসব পর্যালোচনা করার পাশাপাশি স্কুলের দারোয়ানসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এরপর তারা মোটামুটি ধারণা করছেন, এটি অপহরণ নয় আপাতত মনে হচ্ছে সাকিব নিজ থেকেই নিখোঁজ হয়েছে। এছাড়া তার হদিস ও সম্ভাব্য গতিপথ জানতে যে সিএনজি অটোরিকশায় করে গেছে সেটার নম্বর সংগ্রহ করে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগও নিয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া বলেছেন, ‘স্কুল ছাত্র নিখোঁজের ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। স্কুল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আশা করি একটি সুরাহা করতে পারব। তবে এটি এখনো নিখোঁজ নাকি অপহরণ সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!