৬৩২ কোটি টাকা দিতে না পেরে মাফ চেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

টাকার অভাবে দিশেহারা, এখনই দেনা ৮৩০ কোটি

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার থেকে পাওয়া বরাদ্দের বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় নিজেরাই দেবে— চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও সংস্থাটির আর্থিক অবস্থা এতোটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে সেই টাকা তারা আর দিতে পারবে না বলে মাফ চেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৬৩২ কোটি টাকা। চসিকের অপারগতায় এখন এই টাকাও সরকারকেই পরিশোধ করতে হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ (ম্যাচিং ফান্ড) ব্যয় গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া দিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের স্বল্পতার কারণে সেই টাকা আর দিতে পারেনি। এভাবে প্রতিশ্রুত প্রায় ৬৩২ কোটি টাকা যোগাতে ব্যর্থ হয়ে এখন তা মওকুফ চায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

প্রশাসক হিসেবে বিদায় নেওয়ার আগে বকেয়া এই ‘ম্যাচিং ফান্ড’ বাবদ ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মওকুফ চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বরাবর গত ২৫ জানুয়ারি চিঠিও দিয়ে গেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। সেই চিঠি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পেয়েছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি।

চিঠিতে চসিক প্রশাসক উল্লেখ করেছেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব এবং বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সরকার থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। মহাসড়ক, সড়ক, নর্দমা, রাস্তা, মেরামত/সংস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা, মশক নিধন এবং সর্বত্র আলোকায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল কর্মযজ্ঞ। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য প্রাপ্ত অর্থ খুবই অপ্রতুল। আর্থিক দৈন্যতার কারণে নাগরিক সেবার মান নাগরিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অত্র করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের স্বল্পতার কারণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দের বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ম্যাচিং ফান্ড নিশ্চিত করা খুবই কঠিন।’

ওই চিঠিতে লেখা হয়, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড বাবদ বকেয়া ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক বাবদ প্রায় ৮৩০ কোটি টাকার বিশাল অর্থ ঘাটতির বোঝা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে টাকা মাফ চেয়ে চসিক প্রশাসক লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যাচিং ফান্ড বাবদ বকেয়া ৬৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মওকুফের ব্যবস্থা করা হলে নগরবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা এবং সরকারের প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। এই অর্থ মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার একান্ত ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও আন্তরিক সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!