সি-ক্রুজে চট্টগ্রাম থেকে মালদ্বীপ ভ্রমণ, যা ভাবছে বাংলাদেশ

সাগরপথে যেতে সময় লাগবে তিনদিন

এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদ ঢাকায় এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন, তার দেশ চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করতে চায় সমুদ্রপথে। আরও স্পষ্ট করে সে সময় ওই মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি মালদ্বীপের হিথাধু সমুদ্র বন্দরের যোগাযোগ স্থাপন করতে আগ্রহী দ্বীপদেশটি।

এরপর অনেক সময় পেরিয়েছে। ১০ বছর পর এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই মালদ্বীপের হাই কমিশনার শিরুজিমাথ সামিরকে জানালেন, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে ভ্রমণের জন্য ‘সি-ক্রুজ’ চালুর প্রস্তাব বিবেচনা করছে সরকার।

মালদ্বীপের হাই কমিশনার বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সৌজন্য সাক্ষাত করতে গণভবনে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শীতে সমুদ্র শান্ত থাকে। শীত মৌসুমে আমরা সি-ক্রুজ চালু করতে পারি।’

এর মধ্য দিয়ে সেই পুরনো আগ্রহই আবার নতুন রূপে ওঠে এল। ‘সি-ক্রুজ’ চালুর প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে চট্টগ্রাম থেকেই সরাসরি যাওয়া যাবে মালদ্বীপ ভ্রমণে। সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালদ্বীপের দূরত্ব ১ হাজার ৯২৭ নটিক্যাল মাইল, প্রতি ঘন্টায় ২০ নট গতিতে চললে একটি সি-ক্রুজের মালদ্বীপ পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন দিনের কিছু বেশি।

দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের বিভিন্ন উপকূলে অন্তত ২৬টি প্রবালপ্রাচীর রয়েছে। আর আছে হাজারেরও বেশি দ্বীপ। প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে এই দ্বীপগুলো ছড়িয়ে আছে। মালদ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। শতকরা ১০০ ভাগই মুসলমান। অফিসিয়াল হিসাব অনুসারে মালদ্বীপে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশি আছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মালদ্বীপের হাই কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মালদ্বীপের হাই কমিশনার।

এদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপের হাইকমিশনারকে বলেন, ‘ফিশারিজ ছাড়াও আমাদের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আছে। এগুলোর বিষয়েও মালদ্বীপের উদ্যোক্তারা বিবেচনা করতে পারে। সিরামিক, ওষুধ, তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরেও মালদ্বীপ বিনিয়োগ করতে পারে।’

মালদ্বীপের রাজধানী মালের পাশে নতুন শহর গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান হাই কমিশনার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ আহরণে মালদ্বীপের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মালদ্বীপের হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হতে পারে।

মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে পড়তে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা অনেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, এগুলো প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।’

পর্যটন বিষয়ে লেখাপড়া করতে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মালদ্বীপে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশটির হাই কমিশনার বলেন, ‘মালদ্বীপ পর্যটনে ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যেতে পারে।’

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়ছে। তাদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিরুজিমাথ সামির।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!