৫০ বছর পর দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন, পদ ভাগাভাগি হতে পারে দুই বলয় থেকে

প্রায় এক যুগ পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ শনিবার (২৮ মে)। পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলন ঘিরে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তুঙ্গে। পদ পেতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা তৎপর রয়েছেন। শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে বায়োডাটা জমা দিয়েছেন ৫২ জন নেতা। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীরা দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পদ ভাগাভাগির দৌড়ে আছেন। এর মধ্যে বায়োডাটা যাচাই-বাছাইয়ে কেন্দ্রের পছন্দ প্রাধান্য পেলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটিতে চমক আসতে পারে— এমনই আভাস দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশের দুই পাশ ছেয়ে গেছে ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও তোরণে। এছাড়াও কর্ণফুলী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সমন্বিত বড় বড় বিলবোর্ড চোখে পড়ছে।

আর বিশেষ করে সম্মেলনের কেন্দ্র পটিয়া উপজেলার আশপাশের এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি। দলের হাই-কমান্ডের নজরে আসতে চলছে প্রচার-প্রচারণাও।

তবে এবারের কমিটিতে ত্যাগী তৃণমূলের কর্মীরা স্থান পাবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শঙ্কায় রয়েছেন। কারা পাচ্ছেন পদপদবি— তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাটবাজারে একটাই আলোচনা— যুবলীগের সম্মেলন।

শনিবার (২৮ মে) পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ১০টা থেকে। সম্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

এ ছাড়াও অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক সংসদ সদস্য বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খানম, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

এতে প্রধান বক্তা হিসেবে আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ অন্য নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলার সভাপতি পদে ১৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন।

এদিকে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের ত্যাগী তৃণমূলের কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার আসামিরাও। আবার জীবনবৃত্তান্তে শিক্ষাসনদের দিক দিয়ে টেনশনে রয়েছেন অনেকে।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী এবার সভাপতি প্রার্থী। এছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে দিদারুল আলম দিদার, মোহাম্মদ সোলায়মান চৌধুরী, নাসির উদ্দিন মিন্টু, বোরহান উদ্দিন মুরাদ, মোহাম্মদ ফারুক, সোলায়মান তালুকদার, এমএ রহিম, মো. নুরুল আমিন, আব্দুল হান্নান লিটন, শফিউল আজম শেফু, সাইফুল ইসলাম, রাজু দাশ হিরু, আকতার হোসেন প্রমুখ।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের পদপ্রত্যাশীরা জানান, ‘জাবেদ ভাই ও মোছলেম ভাই সমন্বয় করে যাদের চাইবেন তারাই নেতা হবেন। মূলত এই দুটি পদে দুই নেতারা অনুসারীরাই আসবেন— এটা একপ্রকার পরিষ্কার। এর বাইরে গিয়ে যদি কারো সমৃদ্ধ বায়োডাটা কিংবা যোগ্যতা কেন্দ্রের পছন্দ হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় পছন্দও প্রাধান্য পাবে। তবে কোন নেতার পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক না করে যদি দীর্ঘদিন যুবলীগের সাথে যুক্ত এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হয়, তাহলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগ আরো বেশি সুসংগঠিত হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে দক্ষিণ জেলা যুবলীগকে উজ্জীবিত করতে আমাদের কমিটি গঠিত হয়। এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিটি উপজেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে আমরা কাজ করেছি। যে কারণে দক্ষিণের যুবলীগ এখন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সাংগঠনিক ইউনিট হিসেবে সমাদৃত। দক্ষিণের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় শক্তিশালী যুবলীগের কমিটি আছে। আমরা ২০১৭ সালে একবার জেলা সম্মেলন করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় যুবলীগের পটপরিবর্তনে সম্ভব হয়নি। এবারই প্রথম দক্ষিণ চট্টগ্রামে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হতে যাচ্ছে। এ কমিটি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলে উচ্ছাস আছে।

জানা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে মৌলভী সৈয়দকে সভাপতি ও মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। ২০১০ সালের অক্টোবরে আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি হয়।

বিগত ৫০ বছরে কখনো এই গুরুত্বপূর্ণ জেলা ইউনিটে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিবারই কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারই প্রথমবারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। প্রকাশ্যে এ দুটি পক্ষ বিরোধে না জড়ালেও পরোক্ষভাবে বিভাজন আছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদকে ঘিরেই নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকেন। যে কারণে দক্ষিণের কমিটি গঠনের আগে এই দুই বলয়ের মধ্যে কমিটি ভাগাভাগির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা হয়। এবারও কেন্দ্রের পছন্দ প্রাধান্য না পেলে এই দুই বলয় থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাগাভাগি হবে। যদি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে, তাহলে তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে হতাশ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। সেদিন যেকোন সময় সংর্ঘষের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক দিদারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দক্ষিণ জেলার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। দীর্ঘ ১২ বছর পর নতুন কমিটি আসবে। কমিটিতে যোগ্য নেতারাই আসবেন। কারণ যুবলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মানবিক ও সুশৃঙ্খল কর্মকান্ডে যুবলীগের প্রতি নেতাকর্মীদের আগ্রহ বেড়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!