১৮০ মিনিটের বৃষ্টিতে ‘এহাঁডু পানি’র নিচে শহর চট্টগ্রাম

সকাল নয়টা থেকে বারোটা। এই ১৮০ মিনিটের বৃষ্টিতেই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ডুবলো পানির নিচে। নগরীর দুই তৃত্বীয়াংশ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানি, এমনকি গলা পানিতেও ডুবে গেছে।

রোববার (৬ জুন) সকালেই নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। প্লাবিত হয় নগরীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। ফলে সকালে অফিসগামী যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। বিভিন্ন সড়কে রিক্সা চললেও ভাড়া ছিল আকাশচুম্বী।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা অফিসের আবহাওয়াবিদ ড. শহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শনিবার (৫ জুন) দুপুর বারোটা থেকে রবিবার (৬ জুন) দুপুর বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৫ দশমিক ০৪ মিলিমিটার।

এর মধ্যে সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭৫ দশমিক ০৪ মিলিমিটার। আর ভোর ছয়টা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২ দশমিক ০৪ মিলিমিটার।

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, মূলত সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহর তলিয়ে গেছে। মৌসুমী বায়ূ বাংলাদেশে ঢুকে গেছে। আর এ প্রভাবেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

আজ (রোববার) ও আগামীকাল (সোমবার) দুইদিন এ ভারী বর্ষণ চলবে বলে জানান তিনি। তবে সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলোর জন্য কোন সতর্ক সংকেত নেই। দুপুর সাড়ে বারোটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নগরীতে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে।

এদিকে রোববার সকাল থেকেই টানা প্রবল বর্ষণে নগরীর প্রধান সড়ক, গলি, উপগলি পানিতে তলিয়ে যায়। বাসা বাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কক্ষেও পানি ঢুকে পড়ে। নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, খতিবের হাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ, মোগলটুলি, আগ্রাবাদ, ট্রাঙ্ক রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, দেওয়ানহাট, আসকারাবাদ, মনসুরাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া ডিসি রোড, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এসব নিচু এলাকা ছাড়াও নগরীর জামালখান, আন্দরকিল্লা, আসকারদিঘির পাড় এলাকার বিভিন্ন ভবনের নিচ তলায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিভিন্ন কারখানার নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। ফলে এসব কারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

অপরদিকে, চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারী ব্যবসাকেন্দ্র খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যহত হয় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম।

নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। পানি উপচে ফ্লাইওভার বেয়ে নীচে পড়ছে। ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে রাস্তার মাঝে বিকল হয়ে আছে অনেক যানবাহন।

এছাড়া নগরীর বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ নীচু এলাকা কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ এ বর্ষণে এসব নীচু এলাকার বাসিন্দারা জিনিষপত্র সরাতে পারেননি। ঘরের মধ্যে হাঁটু পানির মধ্যেই বসে আছেন। কেউ কেউ পানি সরানোর ব্যবস্থা করলেও বাসার পাশের নালা বন্ধ থাকায় পানি সরছে না।

চকবাজার, রাহাত্তারপুল এলাকার সেমিপাকা কলোনির প্রতিটি বাসায় হাঁটু পানিতে বাসিন্দারা। দুপুরের রান্না কিভাবে সারবেন তা তাদের জানা নেই। নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, সকালের বৃষ্টিতে চান্দগাঁও আবাসিকের অধিকাংশ এলাকা কোমর থেকে হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। অফিসে পৌছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে।

নগরীর সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষকে এরকমই ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক সড়কে কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

আইএমই/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!