হালদায় মা-মাছ শিকারীদের তথ্য দিয়ে মৃত্যুর হুমকিতে পরিবেশপ্রেমী তিন যুবক

হালদা নদীর জীববৈচিত্র্যের প্রতি ভালোবাসাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে হালদাপাড়ের কয়েকজন যুবকের। প্রশাসনের কাছে হালদা নদী থেকে মা-মাছ শিকারের তথ্য দেওয়ার ‘অপরাধে’ মাছচোর সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে তাদের ওপর চলেছে হামলা। তাতে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসেছে এই কয়েকজন হালদাপ্রেমী যুবক। সেই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে এখন আবার তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এমন অবস্থায় তারা ঘরে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করার চার দিন পার হলেও পুলিশ পালন করছে নীরব ভূমিকা।

জানা গেছে, হাটহাজারীর উত্তর মদার্শা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড তালুকদার বাড়ির ফজলুল করিম আদিল, সালমান, মনসুর আলম হালদা নদীর মা-মাছ রক্ষায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বেসরকারি এনজিও সংস্থা আইডিএফের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তাদের উদ্যোগই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। এতে তারা মা-মাছ চোর সিন্ডিকেটের শত্রুতে পরিণত হন।

জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর রাতে মাদার্শা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের দৌলত বাড়ির মফিজ সওদাগরের দুই ছেলে পলাশ( ৩৫) ও মঈনউদ্দীন (২৫), আবদুল মান্নানের দুই ছেলে সাকিব (২১) ও আসিফ (১৯), অছি মিয়া তালুকদার বাড়ির নুর আহমেদের ছেলে আইয়ুব আলী রাসেল (৪০), সালাউল্লা উকিল বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে রাজু (২৬) এবং একই এলাকার রফিক ওরফে ভুট্টুসহ আরও কয়েকজন মিলে আদিল, সালমান ও মনসুরকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মেরে গুরুতর আহত করেন।

২ ডিসেম্বর ঘটনার শিকার ফজলুল করিম আদিল বাদি হয়ে সিন্ডিকেট প্রধান পলাশসহ সাতজনকে আসামি করে হাটহাজারী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পরে অভিযুক্ত আসামিরা গ্রেফতার হলে কিছুটা স্বস্তি আসে এলাকায়।

তবে গত ১৪ ডিসেম্বর আসামিরা জামিনে বের হয়ে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। অন্যথায় তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এতে আদিল, মনসুর ও সালমান ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরেদিন ১৫ ডিসেম্বর তারা তিনজনই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় আলাদা আলাদা জিডি করেন। অভিযোগের চারদিন পার হলেও এখনও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।

জানা গেছে, পলাশের নেতৃত্বে আমতোয়া থেকে ওমরখালী এলাকায় ৫০ জনের মা- মাছ চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা দিন ও রাতে হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে ঘেরা জাল বসিয়ে ও নৌকায় করে মা- মাছ শিকার করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করে এলাকাছাড়া করেন।

আদিল, মনসুর ও সালমানও মা- মাছ শিকারের তথ্য প্রশাসনের কাছে দেওয়ার কারণে তাদের ভয়ে ঘরবন্দী দিন কাটাচ্ছে। তারা রাস্তায় বের হলে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হলেও এখনও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়ে আদিল, মনসুর ও সালমান জানান, হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য প্রেম আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে সেটা কল্পনা করিনি। আমাদের মেরে গুরুতর আহত করার পর আসামিরা গ্রেফতার হলে কয়েকটা দিন স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু গত ১৪ ডিসেম্বর তারা জামিনে বেরিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। নয়তো মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। প্রাণভয়ে এখন আমরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি। কোথাও গেলে তাদের লোকেরা আমাদের অনুসরণ করে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের ওপর হামলায় আসামি গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালত আসামিদের জামিন দিলে তাতে আমাদের করার কিছু নেই। তাদের করা অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে। মাননীয় আদালত জানতে চাইলে আমরা তা জানাব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হালদা রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদার মা- মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে যারা হামলা ও মৃত্যুর হুমকির শিকার, তাদের নিরাপত্তার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই। হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করি।’

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!