স্কুলছাত্রী পলি হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

রেবেকা সুলতানা পলিকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়। পলির ময়নাতদন্ত কিংবা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে কোনো কারসাজি হলে ছাত্র-ছাত্রীরা রাজপথে নামারও হুঁশিয়ারি দেয়। টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে দেওয়া পুলিশের প্রস্তাবকে দুর্ভাগ্যজনক।

রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পলির হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের করা মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গত বুধবার (২ অক্টোবর) বন্দর থানাধীন হালিশহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে পলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। পলি হলিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের (সিটি কর্পোরেশনের স্কুলে) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

পরিবারের দাবি, পলিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খান। সকিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার মেয়ে পলি হত্যার বিচার চাই। আমার নিষ্পাপ মেয়েটিকে আবুল কাশেম ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। পলি কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না। ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তিনি বলেন, আমি চাই না আমার মতো আর কেউ এভাবে সন্তান হারাক। হত্যাকারীর বিচার যদি পাই, তাহলে একটু হলেও পলির আত্মা শান্তি পাবে। আমি গরীব বলে প্রশাসন আমাকে সাহায্য করেনি। পুলিশ প্রশাসনে টাকা খেয়ে হত্যাকারীর পক্ষে নিয়েছে। তারা ১৪ লাখ টাকা হত্যাকারীর কাছ থেকে নিয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে, বিচার চাইতে গেলে পাগল বলে বের করে দেয়। তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে পলির হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

স্কুলছাত্রী পলি হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন 1

নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ লাখ টাকার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা খুবই অনৈতিক একটি প্রস্তাব। শুনেছি পলির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতেও প্রভাবশালীরা উঠে লেগেছেন। তাই আজকের এ মানববন্ধন থেকে বলতে চাই, সাহস নিয়ে কখনো এ কাজ করবেন না। এ কাজ করলে চট্টগ্রামের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার বিচার আজও আমি পাচ্ছি না। বরং এখনো অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে ভায়ভীতি দেখায়। আজকে আমার মতো পলির মা ও তার ভাইসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। এভাবে আর কতদিন রাস্তায় নামতে হবে জানি না। হত্যার বিচার চাইতে আমাদের কেন রাস্তায় নামতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, সে ব্যবস্থা করুন।

এতে বক্তব্য রাখেন ফাইট ফর উম্যান রাইটসের সভানেত্রী ও সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট রেহানা বেগম রানু, সুচিন্তা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বায়ক জিন্নাত সোহানা চৌধুরী, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট মহিলা দলের সভানেত্রী ও এমইএস কলেজের প্রভাষক অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, নগর ছাত্রলীগের সদস্য মো. পাভেল, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রায়হান উদ্দিন, মানবধিকার কর্মী আরিফুর রহমান, পলির ক্লাসমেট তামান্না ইসলাম প্রমুখ।

সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্র নেতা হারুনুর রশিদ হৃদয়ের সভাপতিত্বে ও ছাত্র নেতা সালাউদ্দিন এবং নুরুল আফসার রাফির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কলেজের ছাত্র নেতা কাজী নাঈম, আনোয়ার পলাশ, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!