সেন্ট্রাল হাসপাতালের ‘ভুল চিকিৎসা’য় শিশুর মৃত্যু

চট্টগ্রামের পটিয়ায় সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম, ডা. আবু ছালেক ও ডা. নাজমুলের ভুল চিকিৎসায় মোনতাছির রহমান হৃদয় (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে টানা ৯দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শিশুটি মারা যায়। হৃদয় পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ঘর্জানিয়া পাড়ার প্রবাসী মো. রফিকের ছেলে।

এ ঘটনায় হৃদয়ের মামা খোরশেদ আলম বাদি হয়ে পটিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মে দুপুরে মোনতাছির রহমান হৃদয় বাড়ির লিচু গাছ থেকে পড়ে ডান হাত ভেঙে যায়। পরে তার মা হাছিনা বেগম দ্রুত পটিয়া সেন্ট্রাল হসপিটালের জরুরি বিভাগে ছেলেকে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু ছালেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডান হাতের এক্সরে করার জন্য পরামর্শ দেন। এক্সরে করার পর চিকিৎসকেরা তার হাতটি অপারেশন করার পরামর্শ দেন। আর এ অপারেশনের জন্য ডা. সাইফুল ইসলাম ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ব্যথায় ছেলের কান্নাকাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। ফলে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনের জন্য রাজি হন। ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে ডা. সাইফুল ইসলাম হৃদয়কে অপারেশন রুমে নিয়ে যান। এরপর ডা. সাইফুল ইসলামের নির্দেশে সহকারী ডা. আবু ছালেক ও ডা. নাজমুল লোকাল এনেস্থিসিয়া দিয়ে হৃদয়কে ইনজেকশন পুশ করা মাত্র সে অজ্ঞান হয়ে যায়। প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর অপারেশন রুম থেকে বের হয়ে ডা. সাইফুল ইসলাম হৃদয়ের অবস্থা গুরুতর বলে তার মাকে জানান।

পরে হৃদয়কে চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর থেকে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায় ডা. সাইফুল ইসলাম, সহকারী চিকিৎসক ডা. আবু ছালেক ও ডা. নাজমুলের ।
মোনতাছির রহমানের মামা খোরশেদ আলম বলেন, ৬ বছরের শিশুকে ১৬ বছরের রোগীর ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার ভাগনে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে মৃতুর সাথে টানা নয় দিন পাঞ্জা লড়ে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে মারা যায়।

তিনি আরও জানান, আমার ভাগিনাকে যারা ভুল চিকিৎসা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমার ভাগনেকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া চিকিৎসকদের বিচারের জোর দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অপারেশনের আগে রোগীকে অজ্ঞান করতে হয়। শিশুটির ক্ষেত্রে এনেস্থিসিয়া দেয়ার পর তার হার্ট ফেল করে। তখন আমরা তাকে কার্ডিয়াক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রেফার করি। আমি নিজে গিয়ে শিশুটিকে দেখে আসি এবং চিকিৎসার সবসময় খোঁজ খবর নিয়েছি।

শিশুটি আপনার ভুল চিকিৎসার জন্য শিশুটি মারা গেছে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এরকম পরিস্থিতি তো আমার বাচ্চা আপনার বাচ্চারও হতে পারে! তবে এখানে আমার ইনভলভমেন্ট নেই।

তাহলে আর কার ইনভলভমেন্ট থাকতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ডা. আবু সালেক ও ডা. নাজমুলসহ ছিলেন।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় শিশু হ্দয়ের গ্রামের বাড়ি পটিয়ার হাইদগাঁও ঘর্জানিয়া পাড়ায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!