সুদীপ্ত হত্যায় রিমান্ড শেষে কারাগারে দিদারুল আলম মাসুম

সুদীপ্ত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের লালখান বাজার আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (২১ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তাদের পক্ষ থেকে নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না থাকায় আদালত মাসুমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে আদালতের আদশে পাওয়ার ১৫ দিন পর সোমবার (১৯ আগস্ট) ও মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুই দিন রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মাসুমকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নগরীর দক্ষিণ খুলশীর পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অফিসে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার আদালতে হাজির করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রলীগ নেতা সুদ্বীপ্ত হত্যায় দিদারুল আলম মাসুম ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু তথ্য দিলেও হত্যার দায় বারবার অস্বীকার করছেন।

নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘দুই দিনের রিমান্ড শেষে দিদারুল আলম মাসুমকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কেননা মাসুমের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও রিমান্ডের আবেদন ছিল না।’

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই দিন ধরে নিজেদের হেফাজতে এনে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে লালখান বাজারের দিদারুল আলম মাসুমকে। এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডে মাসুমকে ‘বড় ভাই’ উল্লেখ করে তাকেই হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে বলা হলেও কিন্তু রিমান্ডে তিনি বারবারই তা অস্বীকার করেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন কোন প্রশ্নের জবাবে কি কি উত্তর দিয়েছেন তার তদন্তের স্বার্থে বলেনি পিবিআইয়ের তদন্ত সূত্র।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। গত ১২ জুলাই মিজানুর রহমান নামে এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানান, সুদীপ্ত খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ‘বড় ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম। এরপর গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ থাকা দুটি অস্ত্রের (শটগান/৫৪৪৪/ডবলমুরিং ও পিস্তল/৩৩/খুলশী) লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

ওই আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অস্ত্র দুটির লাইসেন্স বাতিলপূর্বক জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হলে গত ৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে দিদারুল আলম মাসুম নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দুটি জমা দেন। অস্ত্র জমা দেওয়ার পরদিন ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুমকে ঢাকার বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউর ব্লু ওশান টাওয়ারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম। ৫ আগস্ট মাসুমকে আদালতে হাজির করে সুদীপ্ত হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলেও আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।

জানা যায়, দিদারুল আলম মাসুম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আগে প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. আফসারুল আমীনের অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করলেও গত কয়েক বছর ধরে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিত।

২০১৩ সালে লালখানবাজার ও ওয়াসা মোড়ে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে নিজের বৈধ অস্ত্র দিয়ে ‘যুদ্ধ’ করে আলোচনায় এসেছিলেন। এরপরও তিনি লালখান বাজার এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বারবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। দিদারুল আলম মাসুম ১৯৯৭-৯৮ চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে তিনি লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায় তিন বছর কারাবাসের পর দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইওে থাকলেও ২০০৯ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর মাধ্যমে দেশে আসেন।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!