সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ মন্দিরে বিফ বারবিকিউর উদ্যোগ, তোলপাড় ফেসবুক

কিছুই জানে না সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরের নায়েরি তাকবির স্লোগান ও মন্দিরের দরজায় পা দিয়ে ‘কুংফু’ স্টাইলে ছবি তোলার ঘটনায় চলছে সমালোচনার ঝড়। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই তীর্থস্থানে সম্প্রতি ‘বিফ বার-বি-কিউ পার্টি’ করতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে প্রচারণাও করা হয়। এতসবের পরও ‘নিধিরাম সর্দারের’ ভূমিকায় মন্দির পরিচালনাকারী স্রাইন কমিটি। সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে লড়াই করতে করতেই দিন কেটেছে কমিটির।

এর আগেও গত বছর মন্দির আঙিনায় আযান দেওয়ার ঘটনার ঘটনাও ঘটে।

এসব ঘটনা এলকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। তবে এসব ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। সর্তক করা হয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দিরে থাকা ফাঁড়ি পুলিশদের। যদিও পুলিশের দাবি ছবি, ওসব ভিডিও ২ বছর আগের।

সস্প্রতি Tiger Tamim নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে মাথার ওপর পা তুলে চন্দ্রনাথের একটি মন্দিরের দরজায় ছবি তুলেন পোস্ট দেওয়া হয়। ছবিটি দেন কুংফু প্রশিক্ষক মাহমুদুল হাসান তামিম। তবে তিনি দাবি করেন, ছবিটি তিন বছর আগের।

ছবি প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘এই ছবিটি তিন বছর আগে তোলা। তখন আমার বয়স কম ছিল, তাই আবেগের বশে এমন ছবি তুলেছি। তখন বুঝতে পারিনি আমার এমন ছবি অন্যদের মনে কষ্টের কারণ হবে। তাই আমি তাৎক্ষণিক ছবিটি ডিলিট করে দিই এবং এই ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করি।’

পুরনো ছবি দিয়ে ফাঁসানোর দাবি জানিয়ে তামিম বলেন, ‘বিষয়টা তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু এতদিন পর আবার কেন এটা সামনে এলো বুঝলাম না।
যেহেতু বিষয়টা আবারও এসেছে দরকার হলে আমি আবারও ক্ষমা চাইবো,একবার না শতবার ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত আমি।’

তামিমের ‘ক্ষমা’ চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যে ছেলেটার ছবি নিয়ে নতুন করে ইস্যু তৈরি করা হয়েছে, সেটা আরো দুই-তিন বছর আগের। সেই ঘটনায় ছেলেটি যে ক্ষমা চেয়েছে সেরকমও একটি ডকুমেন্টসও আমাদের কাছে আছে।’

মন্দিরে ‘বিফ বার-বি-কিউ পার্টি’র আয়োজন

গত বছর চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নামায দেওয়া এবং মসজিদ স্থাপনের দাবি জানিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন এক যুবক। এরপর চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার আগে গেইটের ব্যবস্থা ও সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন করে মন্দির কমিটি। তবে এসব নিরাপত্তার পর ফের মন্দির এলাকায় ইসলাম ধর্মীয় স্লোগান দিতে দেখা যায় টুপি পড়া একাধিক মুসলিম যুবককে। এছাড়াও ‘ Raihan Riad’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ‘বিফ বার-বি-কিউ পার্টি’ নামে এটি ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়। যদিও সমালোচনার পর গ্রুপটি ডিলিট করে দেওয়া হয়।

কিছুই জানে না মন্দির কমিটি

চন্দ্রনাথ মন্দির পরিচালনার জন্য যে কমিটি রয়েছে সেটি ‘স্রাইন’ কমিটি নামেই পরিচিত। বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয় নেতারা ভোটের মাধ্যমে এই কমিটির দায়িত্বে যান। গত কমিটির মেয়াদকাল শেষ হওয়ায় এবং নতুন কমিটি গঠন না হওয়ায় বর্তমানে কমিটিহীন আছে মন্দিরটি।

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চন্দ্রনাথ মন্দির নিয়ে আলোচনার বিষয়ে জানতে কথা হয় স্রাইন কমিটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশের সঙ্গে।

চন্দ্রনাথ মন্দিরের চলমান বিতর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলোর কোনো কিছুই জানি না আমি, দেখিওনি।’

বিষয়গুলো নিয়ে স্রাইন কমিটির করণীয় কি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কমিটিতে কে আসল সাধারণ সম্পাদক ছিল, তা নিয়েই কমিটির বেশিরভাগ সময় চলে গিয়েছিল। স্রাইন কমিটির এক সহ-সভাপতি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক দাবি করায় কাজ করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।’

তবুও মন্দিরের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক কাজ করেছেন বলে দাবি করেন চন্দন দাশ। সামনে আবারও দায়িত্বে গেলে সব কিছু নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

চন্দন দাশ আরও বলেন, ‘চন্দ্রনাথ মন্দির তীর্থক্ষেত্র, এটা ট্যুরিস্ট স্পট না।’

নিজ তাগিদে নিরাপত্তা বাড়ায় পুলিশ

বর্তমানে যে সকল ইস্যুকে কেন্দ্র করে চন্দ্রনাথ মন্দিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, সেসকল ইস্যু বেশ পুরনো বলে জানান ওসি কামাল। তবুও মন্দিরের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ তাগিদে চন্দ্রনাথ মন্দিরে পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না চাওয়া হলেও নিজ তাগিদে একদিনের মধ্যে নষ্ট থাকা ওয়্যারলেস সেটটি ঠিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ইতোমধ্যে ফাঁড়ির ইনচার্জকে সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান ওসি।

সংসদ সদস্য প্রার্থী চান তীর্থকেন্দ্রে পর্যটন স্পট

আওয়ামী লীগের মনোনীত সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এসএম আল মামুন সীতাকুণ্ডের এক নির্বাচনী প্রচারণায় জানান, তিনি নির্বাচিত হলে চন্দ্রনাথ ধাম-ইকোপার্কসহ সকল পর্যটন কেন্দ্রকে পর্যটন জোনের আওতায় আনা হবে। সেই সময় সেখানে সীতাকুণ্ডের একাধিক হিন্দু নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!