‘সক্রিয় সিন্ডিকেট’ থমকে আছে রেলের কোটি কোটি টাকার লোহা বিক্রি প্রক্রিয়া

রেলওয়ের পরিত্যক্ত লোহা (স্ক্র্যাপ) বিক্রি নিয়ে বরাবরই সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ভেঙে পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে যেখানে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা আয় করছে সেখানে পূর্বাঞ্চল সময় ক্ষেপন করছে ঢাকার একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আর এর সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের পরিত্যক্ত লোহা বিক্রি নিয়ে একটি মহল বরাবরই সক্রিয়। তারা সিন্ডিকেট করে এ খাত থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।

রেল পশ্চিমাঞ্চল ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে স্ক্র্যাপ বিক্রি করে আয় করেছিল সাড়ে ২৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় সাড়ে ৩২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা দরে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন লোহা বিক্রি হচ্ছে ৪২ হাজার টাকায়। দেশের রি-রোলিং মিলগুলোই এসব লোহা কিনে। ২ হাজার টন স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রির লক্ষ্যে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দরপত্র আহবান করে রেলওয়ে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ টন স্ক্র্যাপ বিক্রির জন্য এ দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রেল ভবনে প্রায় ৪ মাস ধরে আটকে আছে এ প্রক্রিয়া ।

জানা যায়, পরিত্যক্ত মালামাল বিক্রির সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার ছিল পূর্বাঞ্চলের জিএম-এর। কিন্তু সেটা বাতিল করে রেলওয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) রোলিং স্টককে এ ক্ষমতা দেয়া হয়। সেখানে আরো কিছু নিয়ম মেনে সিদ্ধান্ত আসার কথা থাকলেও গত ৪ মাসেও তা আসেনি।

সোমবার (১৫ মার্চ) পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের পাহাড়তলী সেল ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, দেড় হাজার টন লোহা, ফিস প্লেট, টিন, কাঠ, ফার্নিচারসহ অপ্রয়োজনীয় মালামাল পড়ে আছে। এসব মালামাল রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় তা খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে, ফলে এসব মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, একটি চক্র সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের উদ্দেশ্যে জটিলতা সৃষ্টি করতে পূর্বের নিয়ম বাতিল করে নতুন সিস্টেম চালু করে। যাতে আয় বাধাগ্রস্ত হয়, রেল উন্নতি করেছে এমন দাবি করতে না পারে। আবার পরিত্যক্ত লোহাসহ অন্যান্য মালামাল কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে পাচার করেও আয় করা হয় লাখ লাখ টাকা। তাই দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি আটকে দিতে পারলে লাভবান হয় ওই চক্রই।

পুরাতন সেল ডিপোর এসিস্টেন্ট সাব ইঞ্জিনিয়ার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘দরপত্রের সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার কারণে স্ক্র্যাপসহ অনেক মালামাল খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। চিঠি দিলেও এই জটিলতার সমাধান হয়নি।’

রেলওয়ের (পূর্ব) জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (ডিপো) পলাশ কুমার সাহার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু জটিলতার কারণে সাময়িক একটু অসুবিধা হচ্ছে তবে শীঘ্রই এটা সমাধান হয়ে যাবে।’

রেলওয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া অবস্থা থাকতে যেখানে দ্রুত মাল বিক্রি করে রেলের আয় বৃদ্ধির কথা, সেখানে এটা না করে কেন আটকে রাখা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। যদি দরপতন হয়, তাহলে রেলকে আয় বঞ্চিত করার দায় কে নেবে?

রেলের সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফরিদ আহমেদ জানান, ‘আশা করি দ্রুত দূর হবে করা হবে এই সব সমস্যা।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!