এহসান আল-কুতুবী : বই পড়ে, লিখে যার দিন রাত কাটে তিঁনি বর্ষীয়ান সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ । আজ তাঁর ঘরের প্রতিটি কোণায় বই আছে ঠিক আগের মত । কিন্তু তিঁনি নেই। চলে গেলেন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ছয়টায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে সিদ্দিক আহমেদ হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ রাখা হবে। আসর নামাজের পর রাউজানের গশ্চি হাইস্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
জানা যায়, সিদ্দিক আহমেদের জন্ম ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রামের রাউজানের গশ্চি গ্রামে। তিনি ছিলেন ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ১৯৬৬ সালে দক্ষিণ রাউজান ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারি, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশগ্রহণকারী, সাপ্তাহিক একতা’র শুরুর দিকে সাংবাদিকতা, ১৯৭০ সালে সংবাদে যুক্ত হয়ে খেলাঘরের সহ-সভাপতি, ১৩৫ টাকার সম্মানীতে খিলগাঁও স্কুলের শিক্ষকতা করেন। ঢাকার কষ্টকর শিল্পিত জীবন শেষে নিজ গ্রামের গশ্চি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, বজলুর রহমান প্রমুখ কীর্তিমানদের সান্নিধ্যধন্য ছিলেন। সর্বশেষ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক আজাদীতে বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে অবসর নেন। প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘খোলা জানালায় গোপন সুন্দরবন’, ‘আপেলে কামড়ের দাগ’, ‘প্রভৃতি’, ‘পিকাসো’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য বই। তার জীবদ্দশাতেই ৩৩৬ পৃষ্ঠার ‘সিদ্দিক আহমেদ সম্মাননা স্মারক’ প্রকাশিত হয় মুহম্মদ নুরুল আবসারের সম্পাদনায়।
সিদ্দিক আহমেদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, সহসভাপতি শহীদ উল আলম, যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ ও নওশের আলী খান।
শোক জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত ও সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, চিটাগাং টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ রিটন, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মশিউর রেহমান বাদল ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ প্রমুখ।
সিদ্দিক আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী ও সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরী, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ডা. চন্দন দাশ, সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান, সংগঠক সুনীল ধর ও আবৃত্তিশল্পী রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম একাডেমির মহাপরিচালক জিন্নাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিপ্লব ও বিপ্লবী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক আলমগীর সবুজ ও সদস্যসচিব মিঠুন চৌধুরী ও পরিবর্তন-চট্টগ্রাম পরিবার।