শাহ আমানতে কার্গো জালিয়াতি, অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছে তদন্ত কমিটি

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হল থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাসের ঘটনায় অভিযুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়াটার ওয়েজের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছে তদন্ত কমিটি। সরকারি শুল্ক পরিশোধ ছাড়া এনবিআরের এ্যসাইকুডা সফটওয়্যারকে ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসের ঘটনায় ওই সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং জালিয়াতির ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে কাস্টম এবং ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেবে কাস্টম হাউজ।

রোববার (৩০ জুন) অথবা সোমবার (১ জুলাই)-এর মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার-২ কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখন কারো নাম প্রকাশ করা যাবে না। তবে তদন্ত কমিটিকে যেসব বিষয়ে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সেসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া ১২টি বিল অব এন্ট্রির বাইরে আরো একটি বিল এন্ট্রিতে জালিয়াতির সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত এখনো চলছে বলে জানান কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে কার্গো পণ্য জালিয়াতির ঘটনায় সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়াটারওয়েজের কর্মকর্তাদের সাথে একটি সংঘবন্ধ চক্র জড়িত রয়েছে। শুল্ক পরিশোধের ডকুমেন্টটি বাইরের একটি কম্পিউটার থেকে পুরণ করে সংশ্লিষ্ট কাস্টম কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সিল নকল করে বিমানবন্দরের ওয়্যার হাউজ থেকে ওই পণ্যগুলো খালাস করে নিয়ে যায়। তদন্ত কমিটি ১৩ বিল অব এন্ট্রির তথ্য পেলেও আরো কয়েকটি টি বিল অব এন্ট্রি থাকতে পারে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, শুল্ক পরিশোধ ছাড়া বিমানবন্দরের কার্গো হল থেকে পণ্য খালাস করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করেছে। জালিয়াতির ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে কাস্টম আইনসহ ফৌজদারি আইনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত: শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাজস্ব পরিশোধ ছাড়া এ্যসাইকুড়া সফটওয়্যার নেটওয়ার্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যায় সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়াটার ওয়েজ লিপিং এজেন্সি। পরবর্তীতে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরে আসলে তদন্ত শুরু করে কাস্টমস হাউজ। ওই তদন্তে বিমানবন্দরের কার্গো হল থেকে পণ্য ছাড় করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়াটার ওয়েজ শিপিং লাইনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপরিশ করা হয়। ঘটনার অধিকতর তদেন্তের লক্ষ্যে ১২ জুন গঠিত হয় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার-২ কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে আহ্বায়ক, অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার আমিনুল ইসলামকে সদস্য সচিব এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রসাদ কুমার মন্ডলকে সদস্য করা হয়েছে। তদন্তের জন্য কমিটিকে ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটিকে যেসব কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা হলো-

১.সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়াটারওয়েজ শিপিং এজেন্সিস লি. চট্টগ্রাম কর্তৃক ২০১৮ সালের (জানুয়ারি, ১-ডিসেম্বর, ৩১)পর্যন্ত দাখিলকৃত কয়টি বিল অব এন্ট্রিতে অনিয়ম সংঘঠিত হয়েছে।

২. কী কী ধরনের অনিয়ম (পণ্য পরীক্ষা না করা, শুল্কায়ন না করা, শুল্ক কর পরিশোধ না করে পণ্য খালাস গ্রহণ ইত্যাদি।

৩. অনিয়ম হওয়া পণ্য চালানের ক্ষেত্রে এ্যসেইনমেন্ট নোটিশ বা রিলিজ অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে কিনা।

৪. আলোচ্য অনিয়মের নামে শুল্ক বিভাগের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের চিহ্নিত করা।

৫. আলোচ্য অনিয়মের সাথে সিভিল এভিয়েশন /বাংলাদেশ বিমানের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের চিহ্নিত করা।

৬. উদঘাটিত অনিয়ম প্রতিরোধের লক্ষ্যে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ।

৭. অন্যান্য কোন অনিয়মের বিষয় যদি থাকে।


এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!