রাঙামাটিতে ভূমিহীন ১৫০ পরিবারের ভাগ্য ইউনুছ কমিশনারের পকেটে!

ছিন্নমূল ভূমিহীন ১৫০ পরিবারকে জমি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে রাঙামাটির সাবেক পৌর কমিশনার মো. ইউনুছের বিরুদ্ধে। ফলে এসব পরিবারের কয়েকশ মানুষের ভাগ্য এখন কমিশনারের পকেটে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার বরাবরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ইসলামপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন রাঙামাটি জেলা সদরের রিজার্ভবাজারের ইসলামপুর এলাকার লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউনুছ কমিশনার।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, ১৯৯৫ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এবং রাঙামাটি পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ছিন্নমূল ভূমিহীন পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকায় ৪ একরের অধিক জায়গায় ১৫০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। প্রকল্পে পুনর্বাসিতদের গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি আত্মকর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে হাঁস-মুরগি পালনে ৭৫০ টাকা এবং মাছ ধরার জন্য জাল ও নৌকা কিনতে ৫-৭ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদানের সহায়তা দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন থেকে।

আমরা তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রঙামাটির প্রধান কার্যালয়ের আশেপাশে জায়গায় থাকতাম। দিনমজুর হয়ে এসেছিলাম দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে।

তারা বলেন, ওইসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রাঙামাটি পৌরসভার তৎকালীন কমিশনার মো. ইউনুছ, রবীন্দ্র লাল দে ও মোজাফ্ফর আহমদ তালুকদার। প্রকল্পটি ওই সময়েই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এতটা বছর পরেও ওইসব অনুদানের টাকা ঋণ দাবি করে বর্তমানে সুদ-আসল হিসাব উল্লেখ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাবেক পৌর কমিশনার মো. ইউনুছ।

যারা হাঁস-মুরগি পালনের জন্য ৭৫০ টাকা পেয়েছিলেন, এখন তাদের কাছ থেকে সুদে আসলে দাবি করছেন ২০-২২ হাজার টাকা। আর মাছ ধরার জন্য যারা ৫-৭ হাজার টাকা পেয়েছিলেন, তাদের কাছ থেকে সুদে আসলে হিসাব দেখিয়ে ৪০-৬০ হাজার টাকা দাবি করছেন মোজাফফর তালুকদার। পরিশোধে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন।

তারা দাবি করে বলেন, দুই তিন মাস আগে ২৩ জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সাবেক পৌর কমিশনার ইউনুছ। আমরা তার আত্মসাৎ করে দেওয়া টাকাগুলো ফেরত চাই। এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

রাঙামাটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ইসলামপুর এলাকার মানুষ যেসব অভিযোগ করছেন সেগুলোর সত্যতা রয়েছে। আমি নিজেই বিস্তারিত যাচাই ও তদন্ত করে দেখেছি।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে সাবেক রাঙামাটি পৌর কমিশনার বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। প্রকল্পটি ওই সময়েই শেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় জায়গা কিনে এবং গৃহনির্মাণ করে দিয়ে ছিন্নমূল ভূমিহীন পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করেছিল রাঙামাটি পৌরসভা। পরে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা দূর করতে এবং তাদের উন্নয়নে ভূমিহীন সমিতির তত্ত্বাবধানে সহায়তা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। আমি সেভাবে সহায়তা করা চেষ্টা করে আসছি।’

অভিযোগ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফিউল্লাহ বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আছে কিনা, দেখতে হবে। এ ধরনের কারও কোনো অভিযোগ থাকলে আদালতে মামলা করা দরকার।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!