রাগে-ক্ষোভে সালাম যাননি উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভায়, তপু-রেজাউলের কাণ্ডে বিরক্ত সব নেতাই

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামের নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত আলোচনা সভায় যোগ দেননি তিনি। দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের বিতর্ককে সঙ্গী করে দুই সদস্য নিয়ে চলা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটির ওপর নানা কারণে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম মূলত আলোচনা সভায় যাননি ছাত্রলীগ নেতাদের অনিয়মের বিষয়ে নিজেদের বিরক্তির কথা জানান দিতে। যদিও এমএ সালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে রাগ ও ক্ষোভ থাকলেও সেই কারণে জেলা ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় যাননি— এই কথা সঠিক নয়।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম দোস্ত বিল্ডিংয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামকে প্রধান অতিথি করে তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, দেবাশীষ পালিত ও জসিম উদ্দিন শাহকে বিশেষ অতিথি করা হয়। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার নাম ছিল না ব্যানারে।

এদিকে সভায় ব্যানারে নাম থাকার পরও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় অনুষ্ঠানস্থলেই জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে প্রকাশ্যেই ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন তোলেন— এমএ সালাম কেন সভায় আসলেন না?

সালামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি দেওয়ার পর থেকে তারা টানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে বারবার। এর মধ্যে উপজেলা কমিটি ও বিভিন্ন পদ দিতে টাকা লেনদেনের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এই দুইজনের বহিষ্কার দাবি করলেও জেলা আওয়ামী লীগ তাদের পাশে ছিল। কিন্তু এর পরেও তারা নিজেদের পরিবর্তন করেনি।’

ওই নেতা বলেন, ‘তারা একটা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছে না। নিজেদের মাইম্যান দিয়ে গঠনতন্ত্রের নির্দেশনার বাইরে কমিটি করার চেষ্টা করছে। এসব কিছুই তারা করছে নিজেদের মত করে। এসব কারণে সালাম ভাই তাদের ওপর বিরক্ত। এই কারণেই তিনি সভায় যাননি বলে আমাদের ধারণা। নাহলে উনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গরহাজির থাকার মানুষ না।’

তবে এই বিষয়ে খানিকটা ভিন্ন বক্তব্য এম এ সালামের। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম এজন্য যাইনি। তাদের ওপর ক্ষোভ-বিরক্তি আছে— এটা ঠিক। তবে সেজন্য আলোচনা সভায় যাইনি তেমন না। তাছাড়া ব্যানারে তো আমার নাম ছিল না।’

কিন্তু ব্যানারে তার নাম ছিল— এই তথ্য জানানোর পর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘তাহলে রাখছে আর কি। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাই পদাধিকার বলে তারা ব্যানারে নাম দিয়েছে হবে হয়তো।’

তবে কি আলোচনা ছাড়াই তাকে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি করেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে এমএ সালাম বলেন, ‘না না তেমন না। তারা আমাকে বলেছিল। আমি ভুলে গেছি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। তুমুল সংঘর্ষে সেই সম্মেলন পণ্ড হলে ৩ মাস পরে একই বছরের ৫ মে দুই সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া সেই আংশিক কমিটিতে সভাপতি পদে মিরসরাইয়ের তানভীর হোসেন চৌধুরী তপু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ফটিকছড়ির রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর গত ৪ বছরে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছে এই দুই নেতা। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের কমিটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠে জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কমিটি অনুমোদনের জন্য দুই দফায় ঢাকা গেলেও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিটি অনুমোদন না দিয়েই তাদের ফেরত পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!