শুনেই ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী— ‘চট্টগ্রামে খালের তলা পাকা করে সর্বনাশ হয়েছে’

‘পানি ওপর থেকে নিচে যেতে পারে না, উপচে শহরে ঢোকে’

চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই খালসহ ছোট ছোট খালের তলদেশ সিমেন্ট-কংক্রিটে পাকা করা হয়েছে— এমন কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি দেশের কোথাও কোনো ধরনের উন্নয়নকাজে খালের তলদেশ কংক্রিটে বাঁধাই না করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এই বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আওতায় চট্টগ্রাম নগরীতে ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট ও ১০টি গোলচত্বর করা হবে।

একনেকের বৈঠক শেষে একসময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান চট্টগ্রামে খালের তলদেশ পাকা করার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিজেই এটা জানতাম না। আমি চট্টগ্রামে চাকরি করেছি। চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল এবং অন্যান্য অনেক খাল প্রায়ই আলোচনায় আসে। নদীর পানি ঢুকে বের হতে পারে না। অনেক সমস্যা আছে চট্টগ্রামের।’

তিনি বলেন, ‘কোনো এক সময় আমরা কেউ একজন নাকি ছোট ছোট খালের নিচে বাঁধাই করে দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা করে সর্বনাশ হয়েছে। পানি ওপর থেকে নিচে যেতে পারে না। উপচে শহরে ঢোকে। এটা কিভাবে হলো, কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ!’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পানি তো শুধু বাইরে যাবে না, নিচেও যাবে। এটা প্রধানমন্ত্রী খেয়াল রাখতে বললেন—খবরদার আপনারা নালা বা খালের তলদেশ সিমেন্ট কংক্রিটে বাঁধাই করবেন না। সেচের জন্য যেটা করে সেটা ঠিক আছে, পানিটা রক্ষা করতে চায়। এটা তো সেচ নয়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ। সুতরাং এখানে নিচে খালি রাখতে হবে।’

এরপরই যে কোনো ধরনের উন্নয়ন কাজে খালের তলদেশ কংক্রিটে বাঁধাই না করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবারের একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— ‘মহিউদ্দিন সাহেবের সময় চট্টগ্রামে অনেক কাজ হয়েছে। সেই ধারা এখন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতি চট্টগ্রামের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান। চট্টগ্রামের নতুন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এটিই অনুমোদন পাওয়া বড় কোনও প্রকল্প বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওই একই সভায় চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল শুধু ঢাকাতে থাকবে কেন, চট্টগ্রামের জন্যও মেট্রোরেল প্রকল্প নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন ২০০৩-০৪ সালে সাড়ে ৯ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রেখে চাক্তাই খালের বেশির ভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৯ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত গভীরতা রেখে চাক্তাই খালের বেশির ভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর পরই পাহাড়ের বালু-মাটি, পলিথিন ও আবর্জনা জমে সেই খাল আবার ভরাট হয়ে যায়। খালের গভীরতা কমে দাঁড়ায় ৩ থেকে ৪ ফুটে।

কিন্তু দুই-তিন বছর পর পাহাড়ি বালু, মাটি ও আবর্জনা জমে খালটি আবার ভরাট হয়ে যায়। এরপর খনন করা হয়নি। একপর্যায়ে খালের গভীরতা দাঁড়ায় ৩ থেকে ৪ ফুটে। অনেক জায়গায় বোঝাই যায় না যে, সেখানে একটি খালের অস্তিত্ব রয়েছে।

চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদরাও বলে আসছেন, চট্টগ্রামের খালের তলা পাকা করার কাজ ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যাচাই-বাছাই ছাড়া তলার মাটি অপসারণ করা ছাড়া বহদ্দারহাট থেকে খাতুনগঞ্জের পোড়াভিটা পর্যন্ত চার কিলোমিটার তলা পাকা করার কারণে খালের তলদেশ ৩-৪ ফুট ভরাট হয়ে যায়। তার ওপর আবর্জনায় ভরাট হওয়া ছাড়াও দখলবাজি চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান খালগুলো প্রায় বিলীন হওয়ার জোগাড়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!