মোবাইল চুরি করে মুহূর্তেই আইএমইআই পরিবর্তন চট্টগ্রামে, কর্পোরেট সিস্টেমে আবার বিক্রি

শতাধিক চোরাই মোবাইলসহ মূলহোতা আটক

বছর দুয়েক আগে ব্রাজিলীয় টেলি যোগাযোগ সংস্থা ভিভোর সার্ভিসিং সেন্টারে কাজ করতেন হাবীবুল্লাহ মিজবাহ (২৫)। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি স্মার্টফোনের মোবাইলের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপেমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আয়ত্ব করে। পরে এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের তামাকুন্ডি লেইন কেন্দ্রীক মোবাইল চুরি ও চোরাই মোবাইল ফোন বেচাকেনার একটা শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলেন তিনি।

৩ ধাপে কাজ করা এই স্মার্টফোন চোর চক্র মাঠ পর্যায় থেকে মোবাইল চুরি করানো থেকে শুরু করে চুরি করা মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে সেটি বাজারজাত করা পর্যন্ত পুরো কাজটাই পরিচালনা করে একটি সুশৃঙ্খল কর্পোরেট ধাঁচে। কোন কোন ক্ষেত্রে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন সম্ভব না হলে সেসব মোবাইল ফোন আবার দীর্ঘদিন নিজেদের কাছে রেখে পরে বাজারে ছাড়ে তারা৷

বুধবার(৬ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় সাজ্জাদ (২০) নামে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশী করে ৫টি মোবাইল সেট উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এমন পেশাদার মোবাইল চোর চক্রের সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এর সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আরও ১০৭টি চোরাই মোবাইল সেট ও আইএমইআই পরিবর্তনের সফটওয়্যার সংযুক্ত ৩টি ল্যাপটপসহ আরও দুজনকে আটক করেছে কতোয়ালী থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার হওয়া ৩ জন হলেন, সাজ্জাত (২০), হাবীবুল্লাহ মিজবাহ (২৫), মো. রাশেদ (২০)। এদের মধ্যে সাজ্জাদ ফেনী সদরের নতুন বাজার এলাকার মো. সেলিমের ছেলে। হাবিবুল্লাহ মিসবাহ সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের কবির আহমেদের ছেলে। রাশেদ ফটিকছড়ির উত্তর ধুরুংয়ের বদিউল আলমের ছেলে।

ডিসি দক্ষিণ জসিম উদ্দিন বলেন, আটক তিন যুবকের একজন ইতোপূর্বে একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকুরি করতো। সেখানে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আয়ত্ব করে। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মোবাইলের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপেমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তনের অবৈধ কাজে নামে। আর তার এই দক্ষতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চোরাই মোবাইলের একটি চক্র।

তিনি আরও বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ এক মিনিটে তারা আইএমইআই পরিবর্তন করতে সক্ষম। আগে মোবাইল ছিনতাইয়ের পর তারা বাজারে বিক্রি করে দিতো। কিংবা চট্টগ্রামের বাইরেও বিক্রি করতো। এখন কমপক্ষে ছয় মাস সময় নিয়ে এসব মোবাইল বাজারে ছাড়ে। যাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি মোবাইলের আশা ছেড়ে দেয় কিংবা পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কতোয়ালি থানার উপ পরিদর্শক মেহেদী হাসান বলেন, ‘বুধবার বিকেলে সাজ্জাদ নামে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশী করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোমিনুল হাসান ৫টি মোবাইল সেট পান। জিজ্ঞাসাবাদে সাজ্জাদ আইইএমই পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে সিডিএ রয়েল প্লাজার ইনোভেটিভ ফোন কেয়ার থেকে সে আইএমইআই পরিবর্তন করিয়ে নেয়। আর ইনোভেটিক ফোন কেয়ারের মালিক হাবিবুল্লাহ মিসবাহ ও তার কর্মচারী রাশেদ আইএমইআই পরিবর্তন করে দেয়।’

‘পরে আমরা অভিযান চালিয়ে হাবিবুল্লাহ মিসবাহ ও রাশেদকে আটক করি। এসময় তাদের দেয়া তথ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ১১৭টি মোবাইল সেট, আইএমইআই পরিবর্তনের সফটওয়ার ইন্সলট করা তিনটি ল্যাপটপ জব্দ করি’

তিনি বলেন, ‘এই চক্রে রিয়াজদ্দিন বাজারের তামাকুমন্ডি লেইনের হক শপিং সেন্টারের চৌধুরী ডট কম নামের দোকানের মালিক জয় চৌধুরীও জড়িত আছেন বলে জানিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া আসামীরা। জয় চৌধুরী এই চক্রের তিনজন আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। জয় চৌধুরির বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী।’

ডিসি দক্ষিণের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এডিসি আমিনুল ইসলাম, এসি (কোতোয়ালী) মো. মুজাহিদুল ইসলাম, ওসি (কোতোয়ালী) জাহেদুল কবির।

এআরটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!