মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে বাংলাদেশের তরুণরা মাতলেন ‘রিয়েলিটি শো’তে

ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশনের সদস্যদের ‘রিয়েলিটি শো’ দেখানো হয়েছে। প্রায় ৪০ মিনিটের এই আয়োজনে নাচ ও গান পরিবেশন করা হয়।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় মুম্বাই নগরের পূর্ব গুরগাঁওয়ের দাদাসাহেব ফালকে চিত্রাঙ্গরিতে (ফিল্ম সিটি) যান ইয়ুথ ডেলিগেশনের ১০০ জন সদস্য।

মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে বাংলাদেশের তরুণরা মাতলেন ‘রিয়েলিটি শো’তে 1

সেখানে তারা বিভিন্ন রিয়েলিটি শো, টিভি সিরিয়াল, বলিউডের বিভিন্ন সিনেমার শুটিং স্পট ঘুরে দেখেন। এছাড়া বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক সুভাষ ঘাই প্রতিষ্ঠিত ‘হুইসলিং উড’ নামের স্টুডিওটি ঘুরে দেখেন। এ সময় স্টুডিওর কর্মকর্তারা ডেলিগেটসদের তাদের ডলবি এডিটিং রুম, সাউন্ড রুম থেকে শুরু করে সিনেমা প্রোগ্রাম রুম ও থিয়েটার ঘুরে দেখান। এই স্টুডিওতে সিনেমার যাবতীয় কাজের পাশাপাশি রয়েছে অভিনয়, সাংবাদিকতা, ফিল্ম মেকিং ও স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের ওপর পড়াশোনা করার সুযোগ।

সুভাষ ঘাইয়ের এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে মাধুরী দিক্ষিত, অনিল কাপুর, হৃতিক রোশনসহ বেশ কিছু অভিনয়শিল্পী, গায়ক, পরিচালকদেরও হাতে ছাপের রেপ্লিকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির দেয়ালে ছবি আকারে সাঁটানো হয়েছে বলিউড সিনেমার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য মুহূর্তের কথা। বলিউডের এই পরিচালকের ‘মুক্তা আর্টস’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে, যেটি এই ‘হুইসলিং উড’র বিপরীত পাশেই। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে।

স্টুডিওর পর ডেলিগেটস দল কয়েকটি শুটিং দেখেন। এর মধ্যে ছিল মন্দির, রাস্তায় টিভি সিরিয়ালের কয়েকটি শুটিংয়ের দৃশ্য। অভিনয়ের জন্য নির্মিত ওই মন্দিরে আদতে কোনো ধরনের দেবতা বা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত নেই। পরিচালকরা সিনেমার কাহিনী অনুযায়ী মূর্তি বসিয়ে অভিনয় সেরে নেন। এই মন্দিরেরই দৃশ্যায়ন হয়েছিল বলিউড লিজেন্ড অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত ‘দিওয়ার’ সিনেমার দৃশ্য।

এছাড়া এই ফিল্ম সিটিতে রাজেশ খান্না ও গোবিন্দ’র ‘স্বর্গ’, শাহরুখ খানের ‘কাল হো না হো’, কুচ কুচ হোতা হে, দেবদাস; সালমান খানের ‘বডিগার্ড’, ‘কিসি কি ভাই কিসি কি জান’; অমিতাভ বচ্চনের ‘ভগবান’ সিনেমার শুটিংও হয়েছে।

এই ফিল্ম সিটিতে আছে ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’, ‘কৌন বানেগা ক্রোড়পতি’, ‘দ্যা কপিল শর্মা শো’, ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’ এর মতো জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোয়ের সেট।

বিভিন্ন শুটিং স্পট দেখে ডেলিগেটসরা যান ‘বলিউড পার্ক’ নামের আরেকটি সেটে। সেখানে থাকা বলিউড সিনেমার বেশ কিছু পোস্টার ও অভিনয়ে ব্যবহৃত সেটে ছবি তোলেন ডেলিগেটসরা। এ সময় মুম্বাইয়ের ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা ও সেটের কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয় ‘রিয়েলিটি শো’। সেখানে বলিউড তারকা গোবিন্দ’র গানে নাচ করে দেখান কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পী। এরপর গান গেয়ে শোনান আরেকজন শিল্পী। মুম্বাই ইয়ুথ অ্যাফেয়ার্সে এক কর্মকর্তা ও ডেলিগেটসের পক্ষে অভিজিৎ কুন্ডু গান পরিবেশন করেন।

জানা গেছে, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ে পূর্ব গুরগাঁও গ্রামে ১৯৭৭ সালে ৫২০ একর জমির ওপর তৈরি করা হয় ‘ফিল্ম সিটি’। পাহাড়, জঙ্গলঘেরা এই জায়গায় ১৬টি স্টুডিও আছে, আউটডোর শুটিং স্পট আছে প্রায় ৪২টি। যেখানে পাহাড় থেকে গাড়ি পড়ে যাওয়া, দুর্ঘটনা, জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার মতো শুটিং হয়। ২০০১ সাল ফিল্ম সিটির নাম ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ জনক হিসেবে পরিচিত দাদাসাহেব ফালকের নামে করা হয়। এই ফিল্ম সিটিতে প্রায় ৯০০ এর ওপর সিনেমার শুটিং হয়েছে।

এদিকে দিল্লি থেকে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন দলের সদস্যরা। আগামী দু’দিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শনের কথা রয়েছে তাদের।

‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ১০০ জন তরুণ প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে ডাক্তার, উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন পেশার তরুণ-তরুণীরা থাকেন।

মূলত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। ভারত সরকারের অর্থায়নে ১০০ জন ইয়ুথ ডেলিগেট হিসেবে প্রতিবছর দেশটি ভ্রমণের সুযোগ পান।

২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ইচ্ছায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি। এর পর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে সফরের আয়োজন করে দেশটির হাইকমিশন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!