ভিডিও তুলে বলাৎকারের ক্ষোভে আওয়ামী লীগ নেতাকে খুন, ভয় দেখিয়ে সমকামিতায় জোরাজুরি

২০ বছরের তরুণ হাফেজ আশরাফুলকে প্রথম দফায় বলাৎকার করার পর মোবাইলে তার ভিডিও ধারণ করে রেখেছিলেন কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিন। এরপর সেই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আবার সমকামিতায় বাধ্য করার জন্য হোটেলে ডাকার পর সাইফ উদ্দিনকে খুন করেন হাফেজ আশরাফুল।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন।

সোমবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিনের (৪৬) হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাইফ উদ্দিনের লাশ দুই হাত বাঁধা অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে ছিল। তার ডান পা, বুক ও গলায় একাধিক ছুরিকাঘাতের দাগ ছিল। পরনে ছিল খয়েরি রঙের প্যান্ট। গায়ে কোনো কাপড় ছিল না। ডান পায়ের হাঁটুতে রক্তের দাগ লেগে ছিল।

নিহত ওই আওয়ামী লীগ নেতা কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি শহরের ঘোনার পাড়া এলাকায়। সাবেক আনসার কমান্ডার আবুল বাশারের পুত্র সাইফ উদ্দিন ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের খুবই ঘনিষ্ঠ।

রোববার (২০ আগস্ট) রাতে সাইফ উদ্দিন দুজনকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন। পরদিন সকালে সানমুন হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে মুখে মাস্ক ও পাঞ্জাবি পরা এক তরুণকে সাইফ উদ্দিনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

এই ফুটেজের সূত্র ধরে সোমবার (২১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হাফেজ আশরাফুল ইসলাম (২০) নামের এক যুবককে আটক করে। টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সামনে চেকপোস্টে পালকি নামের একটি বাস থেকে তাকে আটক করা হয়। আশরাফুল কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। তবে স্থানীয়দের অনেকে তাকে পুরাতন রোহিঙ্গা বলে দাবি করেছেন। আটক আশরাফুলকে পরে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কক্সবাজার শহরের হোটেল সানমুন কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার বিকাল ৫টায় সাইফউদ্দিন ও সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত এক যুবক হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেয়। এরপর রাতেই ওই যুবক হোটেল থেকে বেরিয়ে সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। সোমবার সকালে নিহতের আরেক বন্ধু বৈরাম মোহাম্মদ ইলিয়াছ তাকে হোটেলে খুঁজতে আসেন। তাকে নিয়ে হোটেল ম্যানেজার সাইফউদ্দিনের ভাড়া নেওয়া কক্ষে গিয়ে হুকবিহীন দরজা আটকানো অবস্থায় পায়। দরজা ঠেলে নিহতের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ।

সানমুন হোটেলের ম্যানেজার রেজাউল বলেন, ‘নিহত সাইফ উদ্দিন ও তার বন্ধুরা প্রায়ই এ হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিতেন। এই কারণে সাইফ উদ্দিন হোটেলের সবার কাছে পরিচিত। কাজেই রোববার যখন তিনিসহ আরেকজন মাস্ক পরিহিত যুবক কক্ষ ভাড়া নিতে আসেন তখন আমরা শুধু নিহতের নামই খাতায় নথিভুক্ত করি। কক্ষ ভাড়া নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে আসা যুবক অর্ধভেজা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় হোটেল থেকে বের হন। তিনি যাওয়ার সময় সাইফ উদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে যান। যার ফুটেজ আমাদের সিসিটিভিতে সংরক্ষিত আছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!