ভাইকে খুন, বোনকে নিপীড়নের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

ভাই হত্যার বিচার চেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বোন

চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকায় ছোট বোনকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় বখাটের হামলায় খুন হয়েছেন বড় ভাই। এই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় উল্টো বাদির পরিবারকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এ হত্যা নিয়ে কতিপয় পুলিশ কর্তাদের অবহেলার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে রেশমী আক্তার নামের এক তরুণী।

সোমবার (৩১ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী অভিযোগ করে বলেন, হত্যামামলা দায়েরের পর আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল সিদ্দিক প্রকাশ মেন্টাল জুয়েল, একই এলাকার শহীদ প্রকাশ গুটি, মেম্বার শহীদসহ এলাকার বখাটেরা আমাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান আলী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফসহ কতিপয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আকবরশাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ও এসআই বদিউল অসহযোগিতারও অভিযোগ করেন ওই তরুণী।

জানা গেছে, আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলী এলাকায় বোনকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় গত ২৯ জুলাই বখাটেদের হাতে খুন হন শহিদুর রহমান রনি। ঘটনার পরদিন ৩০ জুলাই আকবর শাহ থানার ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল সিদ্দিকী, একই থানার জব্বার আলী, সারেংবাড়ির বদিউল আলমের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মো. শহিদ, ফতেহ আহমদ চৌধুরীর নতুন বাড়ির আব্দুল মান্নান প্রকাশ মন্নাইয়ার ছেলে মো. শহিদকে আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করে শহিদের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয় মামলা করার পর থেকে আসামি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের হুমকি-ধমকি এবং থানা পুলিশের অসহযোগিতার কারণে বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে খুন হওয়া শহিদের পরিবার।

লিখিত বক্তব্যে রেশমী আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে উত্তর কাট্টলী এলাকায় আমার পরিবার বসবাস করে আসছে। মেম্বার শহিদ, মেন্টাল জুয়েল ও গুটি শহিদসহ এলাকার কিছু চিহ্নিত বখাটে আমাকেসহ আরও বেশ কয়েকজন মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে আসছে। তাদের কারণে অনেক নারী এলাকা ছাড়া হয়ে গেছে। তাদের লালসার শিকার হয়ে অনেকেই ধর্ষিত হচ্ছে। তবে যারা এলাকায় আছেন এসব বখাটের ভয়ে তারা মুখ খোলার সাহস পায় না। ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমার উপর কুদৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রতিনিধি মেম্বার শহিদের। তখন আমার বয়স ১৫ বছর। তখন থেকেই মেম্বার শহিদ আমাকে বিয়ে করতে আমার পরিবারকে চাপ দিয়ে আসছে। এতে রাজি না হওয়ায় তিনি পথে-ঘাটে আমাকে উত্ত্যক্ত করতো। একইভাবে বখাটে শহিদ প্রকাশ গুটি শহীদও আমাকে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করতো। তাদের পক্ষ হয়ে আরেক বখাটে জুয়েল প্রকাশ মেন্টাল জুয়েল আমি ধর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার হুমকি দিত। সর্বশেষ ২০১৯ সালের শেষের দিকে তাদের ভয়ে পরিবার আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার বিয়ের পরও তারা আমাকে উত্ত্যক্ত করতো এবং হুমকি-ধমকি দিত। এসবের প্রতিবাদ করতেন আমার মা ও ভাই শহিদুর রহমান রনি। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই আমি দোকানের যাওয়ার সময় শহিদ আমাকে জোর করে তার ঘরে ঢোকাতে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার করলে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসে। এতে আমি ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাই। ঘটনাটি আমি সেদিনই আকবরশাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে জানাই। তিনি পুলিশের একটি টিম পাঠায়। সেদিন পর্যন্ত ঠিক ছিল। সেদিন পুলিশ এসে শহীদ ও তার পরিবারকে ২৬ জুলাই থানায় যেতে বলে, সাথে আমাদেরও। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সেদিন দুপুর ও বিকেলে শহিদ আমাকে নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। এই তালিকায় যুক্ত হয় ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল, মেম্বার শহিদ ও তাদের ছেলেরা।’

রেশমী ও তার মা বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা হত্যা মামলাদায়ের করি। কিন্তু মামলা দায়েরের পর গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে ঢিল মারা, জোরে আওয়াজ করে আমাদের ভয় দেখানো, দিনের বেলায় আসামিদের পরিবারের সদস্যরা এসিড মারা, আরও একটি লাশ ফেলানো, তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা- ইত্যাদি হুমকি দিতে থাকে। যখন যে ঘটনা আমাদের সাথে ঘটানো হয়েছে সাথে সাথে ওসি স্যারকে আমরা সেগুলো অবহিত করি। সর্বশেষ আমাদের বাড়িওয়ালা কামাল আংকেলকে আকবরশাহ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান আলী ফোনে ও মানুষ পাঠিয়ে প্রথমে আমাদের ঘর থেকে বের করে দিতে চাপ দেন। দুই-একদিন এভাবে কাজ না হওয়ায় লোকমান আলী নিজে বাড়িওয়ালাকে আওয়ামী লীগের অফিসে ডেকে নিয়ে আমাদের ঘর ছাড়তে বলতে উনাকে চাপ দেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলতাফ হোসেন, লোকমান আলীসহ আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বারের এই ঘটনাও আমি ওসি স্যারকে জানাই। আমার বাড়িওয়ালাও ওসি স্যারকে হুমকি বিষয়টি জানান। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেননি ওসি। পরে আমরা সেই ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। পরে উত্তর কাট্টলীরই আরেকটি এলাকায় আমরা এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাড়া নেই। সমস্ত ঘটনা উনাকে জানিয়েই সেখানে উঠি। এখন সেই বাড়িওয়ালাকেও আমাদের বের করে দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।’

এমআইটি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!